সারিবদ্ধ: সভায় আসা বাস দাঁড় করানো হয়েছে ময়দানে। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভা উপলক্ষে এ শহরে লোক আনতে বিজেপি-র পক্ষ থেকে ট্রেন ভাড়া নেওয়ার কথা আগেই জানা গিয়েছিল। বুধবার দেখা গেল, কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন রুটের বেসরকারি বাসও রেহাই পায়নি। যার জেরে শহরজুড়ে ভোগান্তি হল সাধারণের।
একাধিক বাস সংগঠন সূত্রের খবর, কয়েক হাজার বাস এ দিন ভাড়া নেওয়া হয়েছিল সভার কাজে। তার জেরে দুপুরের পর থেকেই কলকাতা এবং শহরতলির রাস্তা থেকে বেসরকারি বাস কার্যত উধাও হয়ে যায়। বাস না পেয়ে প্রবল দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের। তারই সঙ্গে বাবুঘাট, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-সহ ময়দান চত্বরের বিভিন্ন রাস্তার ধারে বিজেপি সমর্থকদের ভাড়া করা বাস দাঁড়িয়ে থাকায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ধর্মতলা এলাকার বহু পথ। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় নিরাপত্তার কারণে যান চলাচল সংক্রান্ত কড়াকড়ি থাকায় দুপুরের পর থেকেই বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে যে সব বাস হাওড়া এবং ধর্মতলা দিয়ে যাতায়াত করে, তার সংখ্যা অনেকটাই কমে আসে। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বিজেপি সমর্থকদের মিছিল আসায় এ জে সি বসু রোড এবং এস এন ব্যানার্জি রোড দিয়েও বেসরকারি বাস-মিনি বাসের চলাচল কার্যত থমকে যায়। সব মিলিয়ে কাজের দিনে চরম সঙ্কটে পড়েন শহরবাসীরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ দিন সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক আত্মীয়কে দেখতে এসেছিলেন জোকার বাসিন্দা দুলাল মিস্ত্রি। অভিযোগ, ফেরার সময়ে ডায়মন্ড হারবার রোডের বাস পেতে তাঁকে রীতিমতো নাজেহাল হতে হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, একই অবস্থা হয়েছে ধর্মতলা থেকে ডানলপ, বিরাটি, শ্যামবাজার, উল্টোডাঙা, নাগেরবাজার, নিউ টাউন, সেক্টর ৫, বারাসত, হাড়োয়া কিংবা বসিরহাটগামী যাত্রীদেরও। উত্তরের মতো দক্ষিণেও খিদিরপুর, গার্ডেনরিচ, নিউ আলিপুর, গল্ফগ্রিন, ঠাকুরপুকুর, গড়িয়া স্টেশন, পাটুলি কিংবা হরিনাভিগামী বাস পেতে গিয়ে জেরবার হতে হয়েছে যাত্রীদের। সন্ধ্যার পরেও মূলত বিভিন্ন রুটে সরকারি বাসের উপরেই যাত্রীদের নির্ভর করতে হয়েছে। আরও অভিযোগ, ব্রিগেডে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় এবং রাস্তায় যানজটের জেরে এ দিন ধর্মতলা থেকে ময়দান হয়ে চলা খিদিরপুর রুটের ট্রামেরও দেখা মেলেনি। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বাড়ে। পাশাপাশি, সমস্যায় পড়তে হয়েছে সরকারি বাসের যাত্রীদেরও। যানজটে পথ আটকে থাকায় ধর্মতলা থেকে আরামবাগ, বর্ধমান, দুর্গাপুর, সিউড়ি, আসানসোল-সহ বিভিন্ন রুটের বাস সময়মতো চলতে পারেননি। জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মূলত দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং কলকাতায় বিভিন্ন রুট থেকে কয়েক হাজার বাস নেওয়া হয়েছিল সমাবেশের জন্য। যে ক’টি বাকি ছিল, দুপুরের দিকে রাস্তা বন্ধ থাকায় সেগুলিও ঠিক মতো চলতে পারেনি। রাস্তায় বাস অমিল হওয়ার সেটাই কারণ।’’
মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সহ-সম্পাদক প্রদীপ নারায়ণ বসু এবং স্বপন ঘোষ জানান, এ দিনের সভায় মিনিবাস সে ভাবে নেওয়া হয়নি। যানজটের কারণে দুপুরে কিছুটা অসুবিধে হলেও, সন্ধ্যার দিকে কিছু মিনিবাস চলেছে। রাজ্য পরিবহণ নিগমের এক আধিকারিক জানান, এ দিন সরকারি বাসের সংখ্যা কমেনি। রাত পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে অনান্য দিনের মতোই সরকারি বাস চলেছে। তবে বেসরকারি বাসের সংখ্যা যে এ ভাবে আচমকা কমে আসবে, তা সরকারি পরিবহণ নিগমের কর্তারাও আঁচ করতে পারেননি বলে দাবি তাঁর।