school

Footpath: দেখার কেউ নেই বাড়িতে, ফুটপাতেই পড়াশোনা

সম্প্রতি বাগুইআটি মোড়ে দেখা গেল, ফুটপাতে বসে ঝুঁকে পড়ে একমনে কিছু একটা লিখছে সঞ্জয়। গোটা গোটা অক্ষরে ভরে উঠছে খাতা। পাশে খোলা পাঠ্যবই। কী লিখছ? সঞ্জয় জানাল, ইংরেজি পাঠ্যবই বাটারফ্লাই থেকে ‘ক্যাটারপিলার’ কবিতাটি খাতায় লিখছে সে। পরদিন ইংরেজি ক্লাসে ওটাই তার ‘হোম টাস্ক’।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২২ ০৮:৩৭
Share:

একাগ্র: মায়ের ফলের দোকানের পাশে বসে পড়ছে সঞ্জয়। নিজস্ব চিত্র।

অতিমারি-পর্বে টানা দু’বছর বন্ধ থাকার পরে অবশেষে খুলেছে স্কুল। পড়াশোনাও শুরু হয়ে গিয়েছে জোরকদমে। অথচ, বাড়িতে বসে পড়ার উপায় তেমন নেই। তাই স্কুলের পড়া করতে ফুটপাতের বাতিস্তম্ভের আলোই ভরসা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সঞ্জয় দাসের। পাশে ফলের ঝুড়ি নিয়ে বসে থাকেন তার মা বন্দনা দাস। প্রতিদিন রাত প্রায় সাড়ে ন’টা পর্যন্ত বাগুইআটির মোড়ে, জগৎপুর যাওয়ার রাস্তায় এ ভাবেই অক্ষরের জগতে ডুবে থাকতে দেখা যায় ছোট্ট সঞ্জয়কে।

Advertisement

সম্প্রতি বাগুইআটি মোড়ে দেখা গেল, ফুটপাতে বসে ঝুঁকে পড়ে একমনে কিছু একটা লিখছে সঞ্জয়। গোটা গোটা অক্ষরে ভরে উঠছে খাতা। পাশে খোলা পাঠ্যবই। কী লিখছ? সঞ্জয় জানাল, ইংরেজি পাঠ্যবই বাটারফ্লাই থেকে ‘ক্যাটারপিলার’ কবিতাটি খাতায় লিখছে সে। পরদিন ইংরেজি ক্লাসে ওটাই তার ‘হোম টাস্ক’।

পাশে বসা ফল-বিক্রেতা, মা বন্দনা বললেন, “করোনা-কালে স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলে মুখ গোমড়া করে বসে থাকত। বার বার বলত— মা, পড়াশোনার কী হবে? আর কি স্কুলে যেতে পারব না?” বন্দনা জানান, পয়সা জমিয়ে ছেলেকে এক জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু স্কুল না খুললে বাকি সব বিষয় দেখিয়ে দেওয়ার মতো বাড়িতে কেউ নেই। সঞ্জয়ের বাবা তাপস দাস বাগুইআটি-কাঠপোল রুটে রিকশা চালান। বন্দনা বলেন, “আমি ফল বিক্রি করি, ওর বাবা রিকশা চালান। স্কুল থেকে ফিরে বাড়িতে একা থাকবে কী করে? তাই স্কুলের পরে ওকে স্বামী আমার কাছে দিয়ে যায়। এখানেই কিছু খেয়ে নেয়। বিকেলে ফল বিক্রিবাটায় কিছুটা সাহায্যও করে। এর পরে রাস্তার আলো জ্বললে পড়তে বসে।”
ইংরেজি আর অঙ্ক প্রিয় বিষয় সঞ্জয়ের। ফুটপাতে বসে সেই বিষয়েই পড়াশোনা করতে দেখা গেল তাকে। তবে ফল কিনতে ভিড় বাড়লে লেখাপড়ায় বিরতি নিয়ে মাকে সাহায্যও করে সে। তাই কোন ফলের কত দাম, তা এত দিনে তার মুখস্থ। অঙ্কের খাতা খুলে বসতে বসতে সঞ্জয় বলল, “দোকানে ভিড় হলে মানুষের ছায়া পড়ে বইখাতায়। তখন আলো কম হয়ে যায়। সেই সময়ে বই-খাতার মুখ আলোর দিকে ঘুরিয়ে দিতে হয়। না হলে পড়তে গেলে চোখে লাগে।”

Advertisement

ভরসন্ধ্যায় বাগুইআটি মোড়ে জনস্রোত আর যানবাহনের আওয়াজের মধ্যেও কী ভাবে দিনের পর দিন পড়াশোনা করে চলেছে ওই ছাত্র, তা ভেবে কিছুটা অবাক স্থানীয়েরাও। ওই ফুটপাতেই বসা আর এক দোকানদার বলেন, “ছেলেটার একটা পড়ার জায়গা হলে ভাল হত। কিন্তু আমিও তো ফুটপাতেই বসি। কোথায় ওকে জায়গা দেব!”

আর বর্ষা এলে? খোলা আকাশের নীচে তখন কী ভাবে পড়বে সঞ্জয়? বন্দনা বলছেন, ‘‘ফল বিক্রি করার জন্য আমারও তো কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। বৃষ্টির সময়ে কোনও চাতালের নীচে চলে যাব। সেখানে বসেই না-হয় পড়বে ছেলে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement