সরকারের ভাল প্রকল্প জনসমক্ষে তুলে ধরলে পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু আইন ভাঙলে কোনও তিরস্কার বা জরিমানার ব্যবস্থা নেই।
এ বার পুজোয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-কে যে সব পুজো কমিটি তাদের মণ্ডপের অলঙ্করণে তুলে ধরবে, তাদের পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। মুখ্যমন্ত্রীর আর এক প্রকল্প, আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পাওয়া ‘কন্যাশ্রী’-কে থিম হিসেবে রেখে পুরস্কারের আশায় রয়েছে বেশ কিছু পুজো। প্রশ্ন উঠেছে, যে সব পুজো কমিটি প্রকাশ্যে আইন ভাঙছে, তাদের জরিমানা করা হবে না কেন?
লালবাজার সূত্রের খবর, একটি নয়, ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ থিমের জন্য পুরস্কার পাবে তিনটি পুজো। সঙ্গে উপরি পাওনা রেড রোডের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের সুযোগ। সেরা পরিবেশবান্ধব পুজোর পুরস্কারও চালু হয়েছে কয়েক বছর আগে। সেটি দেয় পরিবেশ দফতর। আবার সেরা সুরক্ষা ব্যবস্থার নিরিখে পুরস্কার দেয় দমকল। এর মধ্যে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এর পুরস্কার এ বারই প্রথম।
শহরের এক পরিবেশকর্মী বলেন, ‘‘পুরস্কার পাওয়া ওই পুজো কমিটিকে হয়তো দেখা যাবে, বিসর্জনে ডিজে (পেল্লায় সাউন্ড বক্স) নিয়ে নাচানাচি করছে। গণেশ পুজোর বিসর্জনে পুলিশের নাকের ডগায় যে ভাবে ডিজে নিয়ে মিছিল হয়েছে, তাতে দুর্গাপুজোয় যে অনেক দুঃখ আছে, তা বোঝাই যাচ্ছে।’’ ওই পরিবেশকর্মীর প্রশ্ন, ‘‘যারা ডিজে নিয়ে শোভাযাত্রা করবে, পরের বছর তাদের পুজোর অনুমতি কেন বাতিল করবে না পুলিশ? কেন আইন মেনে গ্রেফতার করা হবে না উদ্যোক্তাদের? কেনই বা ধার্য হবে না মোটা অঙ্কের জরিমানা?’’
পরিবেশ দফতরের প্রতিযোগিতায় একাধিক বার বিচারক থাকা এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘যে সব পুজো কমিটি তাদের পুজোর চৌহদ্দি থেকে প্রতিদিন সকালে দর্শকদের ফেলা প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা সরাবে, তাদের জন্যও পুরস্কার চালু করা উচিত। পর্যাপ্ত বায়ো-টয়লেট রেখে যারা পরিবেশ দূষণমুক্ত করবে, তাদেরও মোটা অঙ্কের পুরস্কার প্রাপ্য।’’
রাস্তা বন্ধ করে মণ্ডপ করা এবং হোর্ডিংয়ে ফুটপাথ আটকে রাখায় দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে, প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যদি কোনও মণ্ডপে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্প যথাযথ ভাবে রূপায়িত হয়, অথচ তারা রাস্তা বন্ধ রেখে পুজো করে, তারা কি পুরস্কার পাবে?’’
কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘যে সব পুজো আইন ভেঙে ওভারহেড তোরণ করে বিজ্ঞাপন দেবে, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে কি না, নিশ্চিত করতে হবে লালবাজারের। যারা রাস্তা বন্ধ করে পুজো করে, যারা হোর্ডিংয়ে বাড়ির জানলা বন্ধ করে, তাদেরও ওই তালিকায় রাখা উচিত। না-হলে পুরস্কারের কোনও অর্থই থাকবে না।’’
লালবাজারের কাছে এ সব প্রশ্নের কোনও জবাব নেই। নিচুতলার এক অফিসার বলেন, ‘‘বিসর্জনে ডিজে দেখলে বাজেয়াপ্ত করা নিয়ম। কিন্তু নিচুতলার পুলিশকর্মীদের সেই আইন মানতে বাধ্য করা হয় না।’’ লালবাজার সূত্রের খবর, এক বছর ধরে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রচারে দুর্ঘটনা কিছুটা কমেছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী চান, তাঁর ‘কন্যাশ্রী’র মতো বিশ্বের দরবারে স্থান পাক এই প্রকল্পও। অভিজ্ঞ মহলের মতে, সেই সাফল্য আনতেই লালবাজার এ বার পুজোর সঙ্গে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-কে জুড়তে চাইছে। পুজোকে ব্যবহার করে দুর্ঘটনা কমাতে চাইছে পুলিশ।