Coronavirus Lockdown

আমপানের ১২ দিন পরেও খোলা আকাশই ওঁদের ঠিকানা

ওঁরা শহর কলকাতার একাধিক বস্তি এলাকার বাসিন্দা। যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে দল নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের কাছে শুধুই আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি পাওয়াকে তাঁরা প্রায় ভবিতব্য বলে ধরে নিয়েছেন।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২০ ০৬:০৩
Share:

অসহায়: ঘর তছনছ করেছে আমপান। কিন্তু এখনও সেই দুর্ভোগ কাটেনি রাজাবাজার খালধারের বস্তিবাসীদের। নিজস্ব চিত্র

মোবাইল বা ইন্টারনেট তাঁদের কাছে বিলাসিতা। খালপাড়ে, ফুটপাতের পাশে, ভ্যাটের ধারে ছেঁড়া প্লাস্টিক, কাপড় আর বাঁশের কঞ্চির ঠেকনায় তৈরি অস্থায়ী ঘরগুলোর ওই মানুষেরা শুধু মাথার উপরে ছাদ আর রোজকার অপরিহার্য আলো-জল পেলেই কষ্ট করে চালিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু আমপানের হামলা কেড়ে নিয়েছে তাঁদের সেই সামান্য সঞ্চয়টুকুও। ঝড়ে ধ্বস্ত কাকদ্বীপ, নামখানা বা সাগরের মানুষের সঙ্গে কার্যত তাঁদের কোনও প্রভেদ নেই।

Advertisement

ওঁরা শহর কলকাতার একাধিক বস্তি এলাকার বাসিন্দা। যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে দল নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের কাছে শুধুই আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি পাওয়াকে তাঁরা প্রায় ভবিতব্য বলে ধরে নিয়েছেন। এখনও বাগবাজার, জোড়াবাগান বা রাজাবাজার খালধারে ওই মানুষগুলির নড়বড়ে ঘর দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে আছে। আলো এবং বিদ্যুতের দাবিতে শহরের ‘স্বচ্ছল’ এলাকার বাসিন্দাদের মতো পথে নেমে বিক্ষোভ-অবরোধ তো অনেক দূর, আপাতত ভিজে জবজবে কাপড়চোপড়, জ্বালানি আর চাল-ডাল সামলাতে এবং কোনও মতে ঘরগুলিকে দাঁড় করাতে মরিয়া আমিনা-মিনতিরা। এরই মধ্যে সর্বশেষ কালবৈশাখী তাঁদের সেই গুছিয়ে ওঠার প্রচেষ্টাকে ছারখার করে দিয়েছে।

রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গে কাজ করা একটি সর্বভারতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমপানের পরেই কলকাতার ন’টি বস্তি অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে সমীক্ষা করে। ওই অঞ্চলগুলি হল দক্ষিণেশ্বর, বাগবাজার, রাজাবাজারের দু’টি ওয়ার্ড (২৯ এবং ৩৬), জোড়াবাগান, ধাপা, শোভাবাজার তাড়িখানা, শোভাবাজার ভাঙা মাঠ এবং সাহেববাগান বস্তি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার রেশমী ভট্টাচার্য জানান, ওই বস্তিগুলির প্রায় ৬০০ পরিবার ঝড়ে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁদের ঘর ভেঙেছে, জিনিসপত্র লন্ডভন্ড। ভেঙে গিয়েছে অস্থায়ী শৌচাগারও।

Advertisement

রেশমীর কথায়, ‘‘সব ক’টি জায়গায় ত্রিপল বা প্লাস্টিক দরকার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই ত্রাণ আসেনি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমরা ঝড়ের আগে অনেককে বলেছিলাম, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র একটা প্যাকেটে ভরে কাছাকাছি কোনও নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে।’’

রাজাবাজারের আমিনা বলেন, ‘‘ঝড়ের সময়ে আমরা পাড়ার একটি টিনের কারখানার গুদামে ঠাসাঠাসি করে দেড়শো জন ছিলাম। এলাকার রাজনৈতিক নেতারা পরে এসে বলে গিয়েছেন, সব পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই কথাই সার। এখনও তো কিছু পেলাম না।’’ বাগবাজারের মিনতির কথায়, ‘‘এলাকার এক জনের পাকা বাড়িতে দরকারি কাগজপত্র রেখে আমরা ঝড়ের সময়ে বাচ্চাগুলোকে বুকে আঁকড়ে বস্তিতেই ছিলাম। চোখের সামনে গাছ পড়ে বাড়িগুলো মাটিতে মিশে গেল। কেউ এল না খোঁজ নিতে। গত কয়েক দিন আমাদের কোনও বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি। কী ভাবে যে দিন চলছে, আমরাই জানি।’’

কী বক্তব্য কলকাতা পুরসভার? পুরসভার বস্তি উন্নয়ন বিভাগের ডিজি সুকান্ত দাস বলেন, ‘‘আমার কাছে এমন কোনও খবর নেই।’’ আর প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই রকম অবস্থা তো শুনিনি। মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার অনেক বস্তিতেই আমরা ত্রিপল, প্লাস্টিক দিয়েছি। কিন্তু এই বস্তিগুলির বিষয়ে শুনিনি। খোঁজ নিচ্ছি। ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর এবং বরো চেয়ারম্যানের কাছে তো ত্রাণ সামগ্রী সব দেওয়া আছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘ ঝড়ের পর থেকে দিন-রাত রাস্তাতেই আছি। আর একটু সময় দিন, সব ঠিক হয়ে যাবে।’’

তত দিন অবশ্য খোলা আকাশই ঘর আমিনা-মিনতিদের।

আরও পড়ুন: করোনা-আতঙ্কে শেষ যাত্রার ভরসা বাপিরা-ই

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement