দিনে দুপুরে ডাকাতি। আইন-শৃঙ্খলাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কসবার একটি ফ্ল্যাটে।
ভর দুপুরে তাঁদের নিরাপত্তাহীনতার এই চিত্র দেখে স্বভাবতই ক্ষিপ্ত সাধারণ মানুষ। ওই ফ্ল্যাটের কর্ত্রীর উপস্থিত বুদ্ধিতে, চিৎকার-চেঁচামেচিতে জড়ো হয়ে যান স্থানীয় মানুষ। দুই ডাকাত পালাতে সক্ষম হলেও এক জন ধরা পড়ে যায়। তাকে ধরে উত্তম-মধ্যম পিটিয়েছেন স্থানীয়রা। বেরিয়ে এসেছে নিরাপত্তাহীনতার ক্ষোভ।
পুলিশ জানিয়েছে, কসবার টেগোর পার্কের ওই ফ্ল্যাটে এ দিন শাশুড়ি মীনা চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন প্রিয়া চৌধুরী। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ কলিং বেল বেজে ওঠে। প্রিয়াদেবী দরজা খুলে দেখেন দরজার সামনে তিন যুবক দাঁড়িয়ে। তারা জানায়, আরশোলা মারার ওযুধ বিক্রি করতে এসেছে। প্রিয়াদেবী জানান, তাঁদের কোনও কীটনাশকের প্রয়োজন নেই। দরজা বন্ধ করে দেন তিনি।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফের দরজায় কলিং বেলের শব্দ হতে দরজা খুলে প্রিয়াদেবী দেখেন সেই তিন জন যুবকই দাঁড়িয়ে। এ বার তারা প্রিয়াদেবীর কাছে জল খেতে চায়। এ দিন প্রিয়াদেবী বলেন, ‘‘জল আনার জন্য আমি ঘরের ভিতরে ঢোকার সময়ে বুঝতে পারি ওই তিন জনও আমার পিছনে পিছনে ঘরে ঢুকে আসছে। আমি ঘুরে দাঁড়াতেই একজন আমার দিকে বন্দুক তাক করে ধরে।’’ ঘাবড়ে না গিয়ে প্রিয়াদেবী সরাসরি যুবকের হাত ধরে নেন। গন্ডগোলের আভাস পেয়ে মীনাদেবী ঘর থেকে ড্রয়িং রুমে বেরিয়ে আসেন।
প্রিয়াদেবী জানান, তিনি যুবকের হাত ধরে ফেলায় তাঁকে অন্য এক ডাকাত মারতে শুরু করে। এই সময়ে তাঁর দুল ও নথ ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে প্রিয়াদেবীর অভিযোগ। আহত হন তিনি। মীনাদেবী এই সময়ে দোতলা ফ্ল্যাটের বারান্দায় গিয়ে চিৎকার করতে শুরু করেন। অন্য এক ডাকাত তা দেখে বারান্দা ও ড্রয়িং রুমের মাঝের দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রিয়াদেবী জানান, ডাকাতেরা আরও গয়না চায়। কিন্তু, ততক্ষণে মীনাদেবীর চিৎকারে স্থানীয় মানুষ যে জড়ো হচ্ছেন তা আঁচ করতে পারে যুবকেরা। তারা ফ্ল্যাটেই বন্দুক ফেলে পালায়।
দুই ডাকাত পালিয়ে গেলেও এক জন ধরা পড়ে যায় ক্ষিপ্ত জনতার হাতে। তার কাছে যে ব্যাগ ছিল সেখান থেকে মুখ বাঁধার ফিতে, তিনটি ছুরি এবং ওই ডাকাতের আধার কার্ড পাওয়া যায়। তাকে ধরে মারধর করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিষেক ভারতী নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ঘটনার সময়ে ওই ফ্ল্যাটের কাছেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁরা কয়েক জন যুবক মিলে গল্প করছিলেন। মীনাদেবীর চিৎকার শুনে তাঁরা দৌড়ে আসেন। দেখেন তিন জন ফ্ল্যাটবাড়ির গেট দিয়ে বেরিয়ে পালাচ্ছে। তখন এক জনকে ধরে ফেলেন তাঁরা। তখন আশপাশের লোকেরাও জড়ো হয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আহত অবস্থায় ওই ডাকাত অর্ধেন্দু দে-কে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করে।
মীনাদেবীর স্বামী সুনীলবাবু ও তাঁর ছেলে রাজীব খবর পেয়ে বাড়ি ফেরেন। সুনীলবাবু জানান, দু’মাস আগেও তাঁর বাড়িতে চুরির চেষ্টা হয়েছিল।