নেশামুক্তি কেন্দ্রের মালিকের স্বামী তাঁকে গালিগালাজ করেন এবং তরুণীর সঙ্গে কথা বলার জন্য এক মহিলাকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। প্রতীকী ছবি।
নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে বুধবার নিজের বক্তব্য প্রকাশ করলেন যাদবপুরের সেই তরুণী। নিজের বয়ানে পুলিশ এবং যে দু’টি নেশামুক্তি কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে তাঁকে রাখা হয়েছিল, সেগুলির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন তিনি। এমনকি, ওই দুই কেন্দ্রে গায়ে হাত দিয়ে পোশাক খুলিয়ে তল্লাশি করারও অভিযোগ এনেছেন ওই তরুণী। যদিও ওই দুই নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। কেউই ফোন ধরেননি। মেসেজের উত্তর দেননি। লালবাজারের যদিও দাবি, আইন মেনে সবটা করা হয়েছে। তরুণী চাইলে মামলা করতে পারেন।
গত রবিবার সকালে যাদবপুর থানা থেকে ওই তরুণীকে জোর করে নেশামুক্তি কেন্দ্রের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি-সহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন তরুণীর বন্ধুরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে যাদবপুর থানার সামনে অবস্থান-বিক্ষোভও হয়। একাধিক সংগঠন প্রতিবাদ জানায়। এ ভাবে প্রাপ্তবয়স্ক কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী থেকে চিকিৎসকেরা। পরে বুধবার কল্যাণীর একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে তরুণীকে ছাড়িয়ে কলকাতায় নিয়ে আসেন বন্ধুরা।
ওই তরুণী একটি লিখিত বার্তায় এ দিন জানিয়েছেন, প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাবড়ার একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে। সেখানে একটি ঘরে আরও সাত জন মেয়ের সঙ্গে রাখা হয় তাঁকে। তরুণী অভিযোগ করেন, ১০ ফুট বাই ১২ ফুটের ঘরে আট জন মেয়েকে রাখা হয়েছিল। ঘরটিতে কোনও জানলা ছিল না। শুধু খাবার দেওয়ার জন্য জানলার মতো একটি ব্যবস্থা ছিল। নেশামুক্তি কেন্দ্রের মালিকের স্বামী তাঁকে গালিগালাজ করেন এবং তরুণীর সঙ্গে কথা বলার জন্য এক মহিলাকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।
ওই রাতেই পৌনে ১টা নাগাদ তরুণীকে একটি গাড়িতে চাপিয়ে, কাচ তুলে দিয়ে, জোরে গান চালিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। সেটি কল্যাণীর একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র। সেখানে পোশাক খুলিয়ে গায়ে হাত দিয়ে তল্লাশি করা হয়েছে বলে তরুণীর অভিযোগ। ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে একটি শৌচাগার রয়েছে। তবে সেটির কোনও দরজা নেই। সেখানে সকলে মিলে ওই একটি মাত্র শৌচাগারই ব্যবহার করেন বলেও তরুণীর দাবি। সেই সঙ্গে নীতি-পুলিশির একাধিক অভিযোগ করেছেন তরুণী।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয় হাবড়ার নেশামুক্তি কেন্দ্রের মালিকের সঙ্গে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। টেক্সট মেসেজেরও উত্তর দেননি। কল্যাণীর নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের তরফেও উত্তর মেলেনি। ফোনে যোগাযোগ করা গিয়েছিল তরুণীর বাবার সঙ্গে। তাঁর বিরুদ্ধেও এ দিন একাধিক অভিযোগ জানিয়েছেন তরুণী। তরুণীর বাবা ফোনে বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। এ বিষয়ে আর কথা বাড়াতে চাই না। মেয়ে যাঁদের সঙ্গে ভাল থাকবে ভেবেছে, তাঁদের কাছেই ফিরে গিয়েছে।’’