প্রতীকী সরস্বতী পুজোর মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদ এসএসসি-র নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীদের। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
সরস্বতীর স্কুল কামাই হচ্ছে। পড়াশোনা হচ্ছে না ঠিক মতো। খানিক চিন্তিত মুখে এমনটাই জানালেন ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ মঞ্চে বসা তার মা। বাড়িতে দেখার তেমন কেউ নেই। সেই কারণে পাঁচ বছরের সুরঞ্জয়ী দাস মণ্ডলকে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই আসতে হয় ধর্মতলায়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না মঞ্চে।
বুধবার, সরস্বতী পুজোর আগের দিন ধর্না মঞ্চে মায়ের পাশে সরস্বতীর সাজে বসে ছিল নার্সারির পড়ুয়া সেই ছোট্ট মেয়ে। তবে, মা মাম্পি দাস মণ্ডলের আক্ষেপ, “ওর পড়াশোনাটা ঠিক মতো হচ্ছে না। কারণ, ওকে প্রায়ই আমার সঙ্গে ধর্না মঞ্চে আসতে হয়। বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুরমশাই অসুস্থ। স্বামী বেরিয়ে যান কাজে। ওকে তো একা রেখে আসতে পারি না। তাই ওর স্কুল কামাই হচ্ছে। বাড়ি ফিরে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে। পড়াশোনা করতে পারে না।” মাম্পি জানান, তাঁরা থাকেন হাওড়ার জগাছায়।
এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবস ও সরস্বতী পুজো একই দিনে পড়েছে। তাই আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে ওই একটি দিন তাঁদের গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বসতে নিষেধ করেছে ময়দান থানার পুলিশ। চাকরিপ্রার্থীরা জানালেন, ওই ধর্না মঞ্চে সমস্ত উৎসবই তাঁরা পালন করেন। তাই সরস্বতী পুজোটা বাদ দিতে চাননি। অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক হয়, বৃহস্পতির বদলে বুধবারই হবে দেবীর আরাধনা। মাম্পির মেয়েকেই তাঁরা সরস্বতী সাজাবেন এবং ধর্না মঞ্চে সেই সরস্বতীর কাছেই প্রার্থনা জানাবেন, তাঁদের নিয়োগ যেন দ্রুত হয়।
মাম্পি জানান, সরস্বতীর বীণা বাড়ি থেকেই তৈরি করে এনেছেন তিনি। থার্মোকলের উপরে কাগজ সেঁটে, তার উপরে রং করে বীণা বানানো হয়েছে। অন্য চাকরিপ্রার্থীদের কেউ এনেছেন ফুলের মালা, কেউ বা ঝুটো গয়না। মাম্পি বললেন, “মেয়েকে সরস্বতী সাজিয়েই বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।” অভিষেক সেন নামে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘কোনও রকম ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করে এই সরস্বতী পুজো হয়নি। ছোট্ট সরস্বতীকে প্রার্থনা জানিয়ে বলেছি, দ্রুত মেধা তালিকা প্রকাশ হোক এবং আমরা যেন তাড়াতাড়ি নিয়োগপত্র পাই।”
সরস্বতী সেজে বসে থাকা সুরঞ্জয়ীর মা মাম্পি জানান, তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা পদে চাকরিপ্রার্থী। এসএসসি-র মহিলা বিভাগে তাঁর র্যাঙ্কিং ৪৪। মাম্পির কথায়, “সিবিআই ওএমআর শিট বার করেছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেরই চাকরি হয়েছে। বেআইনি ভাবে নিয়োগ না হলে আমরা এত দিনে স্কুলে চাকরি করতাম। আজ হয়তো ব্যস্ত থাকতে হত স্কুলের সরস্বতী পুজোর আয়োজনে। কিন্তু আমরা এখনও রাস্তায় বসে।” মাম্পির পাশে বসা অন্য কয়েক জনও বললেন, “সরস্বতী পুজোর আগের দিন আমরা হয়তো পড়ুয়াদের সঙ্গে পুজোর বাজার করতে যেতাম। তার বদলে ধর্না মঞ্চে বসে আছি।”
সরস্বতী পুজোর আগের দিনও তাই ধর্না মঞ্চে ‘নিয়োগ চাই, নিয়োগ চাই’ বলে স্লোগান তুললেন তাঁরা। বুধবার তাঁদের ধর্নার ৬৮২ দিন হল। নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন, আর কত দিন তাঁদের এ ভাবে অপেক্ষা করে যেতে হবে?