Pollution

Pollution: দূষণে নয়, দূষণ রোধে তৈরি কমিটির কাজেই বেশি ‘ধোঁয়াশা’

মেয়রের গঠিত কমিটির কাজকর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন মেয়র পারিষদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২২ ০৬:৪০
Share:

নারকীয়: ভ্যাট থাকলেও আবর্জনা ফেলা হয়েছে রাস্তায়। তার পাশ দিয়েই যাতায়াত। রবিবার, হাওড়া সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডে।। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

মেয়রের গঠিত কমিটির কাজকর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন মেয়র পারিষদ। আবার মেয়র পারিষদ নতুন কমিটি গঠন করে কী পদক্ষেপ করছেন, সে সম্পর্কে জানেন না খোদ মেয়রই! আমেরিকার গবেষণা সংস্থায় কলকাতার দূষণ-নগরীর ‘শিরোপা’ পাওয়া নিয়ে যখন বিভিন্ন স্তরে চর্চা চলছে, তখন বায়ুদূষণ রোধে গঠিত একাধিক কমিটির কাজকর্মের ‘ধোঁয়াশা’য় যেন দিগ্‌ভ্রান্তের অবস্থা কলকাতা পুরসভার!

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের বায়ুদূষণ রোধে রূপরেখা তৈরি করতে ২০১৯ সালের নভেম্বরে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে আইআইটি খড়্গপুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি (হাইপাওয়ার্ড অ্যাডভাইজ়রি কমিটি) তৈরি হয়েছিল। করোনা সংক্রমণের আগে দু’-তিন বার সেই কমিটির বৈঠক হলেও তার পরে আর কমিটির খোঁজ নেই। এ সম্পর্কে জানতে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কমিটি সম্পর্কে এই মুহূর্তে কিছু জানি না।’’ সঙ্গে তাঁর সংযোজন, বায়ুদূষণ রোধে দিগ্‌নির্দেশ পেতে পুরসভায় একটি বৈঠক হবে। ফিরহাদের কথায়, ‘‘সেই বৈঠকে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আরও কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা হবে।’’

যা শুনে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, আরও একটি কমিটি গঠন করা হতে পারে। অর্থাৎ, একই বিষয়ে কমিটির পর কমিটি— সরকারি কাজকর্মে যা একটা দস্তুর দাঁড়িয়ে গিয়েছে। অথচ ইতিমধ্যেই পুরসভার পরিবেশ ও ঐতিহ্য দফতর বায়ুদূষণ রোধে যে আর একটি কমিটি গঠন করেছে, তা মেয়রের জানা নেই বলেই পুর প্রশাসন সূত্রের খবর। যেমন ভাবে সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারও মেয়র গঠিত কমিটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। স্বপনের কথায়, ‘‘ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না। তবে আমরা অন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছি। গোটা শহরকে বিভিন্ন জ়োনে ভাগ করে একদম মাইক্রো স্তরে গিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’

Advertisement

তা হলে ২ বছর ৯ মাস আগে শহরের বায়ুদূষণ রোধে মেয়রের গঠিত কমিটির হল কী? তা কি বেমালুম হাওয়ায় উড়ে গেল? এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের একাংশের বক্তব্য, চলতি বছরের শুরুতে কমিটির তৈরি রিপোর্ট পুর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরে পুর কর্তৃপক্ষ আর যোগাযোগ করেননি। কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘উল্টে বলা হল, বায়ুদূষণ রোধে পুরসভা কাজ শুরু করে দিয়েছে। এ বার কাদের সুপারিশের ভিত্তিতে তারা কী কাজ করছে, তা জানি না।’’

আবার পুর প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার দাবি, সব বিশেষজ্ঞের মতামত সংবলিত একটি রিপোর্ট কমিটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে তারা কোনও রিপোর্টই জমা দেয়নি। ‘‘হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো রিপোর্ট তো সরকারি ভাবে গ্রাহ্য হবে না। কারণ পরিস্থিতি এখন এমন নয় যে, পুরসভায় এসে রিপোর্ট দেওয়া যাবে না।’’— বলছেন ওই কর্তা।

এ দিকে, মেয়র ও মেয়র পারিষদের গঠিত কমিটি সম্পর্কে পরস্পরের ‘অজ্ঞতা’ প্রসঙ্গে পুর প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, পুরসভার প্রধানেরা দৈনন্দিন কাজের মধ্যে একে-অপরের দফতর সম্পর্কে না-ই জানতে পারেন, কিন্তু এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুর আধিকারিকেরা তো জানবেন! তাঁরা কেন এই সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেননি?

ফলে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বাতাসে ধুলো-দূষণের থেকেও বায়ুদূষণ রোধে গঠিত কমিটির কাজকর্ম নিয়ে এই মুহূর্তে বেশি ‘ধোঁয়াশা’ পুর মহলে। শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ কাদের সুপারিশে করা হচ্ছে? মেয়র গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের সুপারিশে, না কি মেয়র পারিষদের সঙ্গে বৈঠক করা বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে?— এমন একাধিক প্রশ্নও উঠেছে। যার প্রেক্ষিতে এক পদস্থ কর্তা বলছেন, ‘‘আগে কমিটি নিয়ে এই ধোঁয়াশা কাটুক। তার পর না হয় বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ করা যাবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement