Calcutta High Court

Calcutta High Court: কোর্টের আদেশে শুরু হলেও বন্ধ বিরল রোগের চিকিৎসা

সন্তানদের জন্য বিপুল খরচের ওই চিকিৎসায় সরকারের সাহায্য চেয়ে ২০২০ সালে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন চার শিশুর অভিভাবক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২২ ০৫:৩৭
Share:

ফাইল চিত্র।

হাইকোর্টের আদেশে শুরু হয়েছিল। কিন্তু থমকে গেল বিরল রোগে আক্রান্ত তিন শিশুর চিকিৎসা। বিরল রোগ মিউকোপলিস্যাকারাইডোসিস (এমপিএস) টাইপ ওয়ান এবং গসার ডিজ়িজ় ওয়ান-এ আক্রান্ত চার শিশুর চিকিৎসা শুরু করেছিল রাজ্য সরকার। তাদেরই তিন জনের চিকিৎসা আপাতত স্থগিত হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, সারা জীবনের জন্য জরুরি প্রতি সপ্তাহের যে ওষুধ, তা-ও বন্ধ গত তিন সপ্তাহ।

Advertisement

সন্তানদের জন্য বিপুল খরচের ওই চিকিৎসায় সরকারের সাহায্য চেয়ে ২০২০ সালে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন চার শিশুর অভিভাবক। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চ ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর রায় দেয়, দ্রুত বিনামূল্যে চার শিশুর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। তার পরেও নীরব ছিল সরকার। হাই কোর্টের রায় না মানায় আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। তার শুনানি হয় চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি। যেখানে বলা হয়েছিল, ১৭ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির আগে চার শিশুর চিকিৎসা শুরু না-করলে আদালত অবমাননার নোটিস জারি করা হবে। এর পরেই শুরু হয় চিকিৎসা।

যদিও গসার ডিজ়িজ় ওয়ানে (শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, বিশেষত যকৃৎ এবং প্লীহায় চর্বি জাতীয় পদার্থ জমে স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়) আক্রান্ত অদ্রিজা মুদি তখন অসুস্থতার বাড়াবাড়ির কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। ফলে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছিল পরে। মেয়ের সেই ওষুধ আপাতত মিললেও সেটিও বন্ধের আশঙ্কা করছেন তার বাবা, মূল মামলাকারী জয়ন্ত মুদি।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা, ভাগচাষি ইমতিয়াজ ঘোষির ছেলে ইমরান এমপিএস টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত। এই রোগে শর্করা অণুর লম্বা শিকল ভাঙার জন্য শরীরে একটি বিশেষ উৎসেচক তৈরি হয় না অথবা কম পরিমাণে তৈরি হয়। এই রোগের কারণে সাড়ে পাঁচ বছরের ইমরানের বিভিন্ন সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়ছিল। গত ১২ সপ্তাহের চিকিৎসায় সে সাড়া দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ইমতিয়াজ। চিন্তিত বাবার কথায়, ‘‘সর্দি, জ্বর আর পেটের সমস্যা লেগেই থাকত। সেগুলি এখন অনেক কম। হাত-পায়ের আড়ষ্টতাও অনেকটা কমেছে। কিন্তু তিন সপ্তাহ ওষুধ বন্ধ। আদৌ কবে চালু হবে জানি না।’’

সন্তানদের চিকিৎসা বন্ধ হওয়ায় আতঙ্ক গ্রাস করছে এমপিএস টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত বছর সাতেকের শেখ মেহফুজ আলির বাবা মোক্তার আলি এবং বারো বছরের অরিজিৎ মণ্ডলের বাবা বিশ্বজিৎ মণ্ডলকেও। মেহফুজ এবং ইমরান ১৬ মে ওষুধ নিতে এসএসকেএমে ভর্তি হয়। দু’দিন পরে তাদের অভিভাবকদের জানানো হয়, ওষুধ নেই। ওষুধ এলে ফোন করা হবে। দুই পরিবারের অভিযোগ, তিন সপ্তাহ পেরোলেও সেই ফোন আসেনি।

শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের মতে, ‘‘এই ধরনের অসুখের ক্ষেত্রে ওষুধের ছেদ বড় ফারাক তৈরি করে। যত দ্রুত সম্ভব ওষুধ শুরু করতে হবে, নয় তো যেটুকু উন্নতি হয়েছে ফের তা নষ্ট হয়ে যাবে। সরকার যখন দায়িত্ব নিয়েছে, তখন অন্য ভাবে হলেও ভাবতে হবে।’’

ওষুধের বিষয়ে খোঁজ নিতে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক বা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও উত্তর মেলেনি। বিরল রোগের চিকিৎসায় কমিটি গড়েছিল এসএসকেএম। সেই কমিটির এক সদস্য, শিশুরোগ চিকিৎসক সুপ্রতিম দত্তকে ফোন বা মেসেজ করলেও উত্তর আসেনি। হাই কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে এসএসকেএমকে চার রোগীর চিকিৎসা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। তাঁকেও ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ করে উত্তর মেলেনি।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর বক্তব্য, ‘‘বিশেষধরনের ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে নিয়মের অনেক জটিলতা আছে। সেইপদ্ধতি কোন পর্যায়ে, খোঁজ করে দেখতে হবে। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement