বদল: দুর্গোপুজোর এই চেনা ভিড় (ইনসেটে) এ বছর দেখা যাবে না মহম্মদ আলি পার্কে (উপরে)।ছবি: বিশ্বনাথ বণিক, ফাইল চিত্র
এ বার দুর্গাপুজো হচ্ছে না মহম্মদ আলি পার্কে! স্থান বদল হচ্ছে সেই পুজোর। তবে শুধু চলতি বছরের জন্য। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুর প্রশাসনকে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন ওই ক্লাবের সভাপতি।
কেন এই স্থান বদল?
পুরসভা সূত্রের খবর, মহম্মদ আলি পার্কের পুজো রাজ্যবাসীর কাছে অন্যতম দ্রষ্টব্য। কিন্তু অনেকেই জানেন না, ওই পার্কে একটি ভূগর্ভস্থ বড় জলাধার রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে তৈরি ওই জলাধার ইটের কাঠামো দিয়ে তৈরি। কালের নিয়মে সেই কাঠামো অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। মাসখানেক আগে আচমকা জলাধারের চারপাশে থাকা ইটের পাঁচিলের কিছুটা অংশ ভেঙে যায়। জল বেরিয়ে ভাসিয়ে দেয় মহম্মদ আলি পার্ক চত্বর। যা ছড়িয়ে পড়ে লাগোয়া চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। পুরসভার পার্ক ও উদ্যান দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানান, তার পরেই পার্ক এবং জল সরবরাহ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সমীক্ষা করানো হয়। তাঁরা ওই জলাধারের ইট নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করেন। পরে পুর প্রশাসনকে বিশেষজ্ঞেরা জানান, জলাধারের ইটের কাঠামো খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে তা নতুন করে তৈরি করতে হবে। আর সেই সময়ের মধ্যে পার্কের উপরে কোনও রকম চাপ দেওয়া চলবে না। তা হলে, জলাধারের বাকি অংশও ভেঙে পড়তে পারে।
যাদবপুরের ওই সতর্কবার্তা পেয়ে সমস্যায় পড়ে পুর প্রশাসন। এর পরেই মেয়র ফিরহাদ হাকিম পার্ক পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন। সম্প্রতি মেয়র এবং দেবাশিসবাবু মহম্মদ আলি পার্কে গিয়ে পুজো কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন। সেখানেই মেয়র তাঁদের জানান, পার্কের যা অবস্থা তাতে সেখানে এ বার পুজো করা খুব বিপজ্জনক হবে। যাদবপুরের বিশেষজ্ঞেরাও বলেছেন, জলাধার সংস্কার না করে পার্কের উপরে চাপ দেওয়া চলবে না। বৃহস্পতিবার ফিরহাদ জানান, মহম্মদ আলি পার্কের পুজো দেখতে সারা রাজ্য থেকে কয়েক লক্ষ মানুষ আসেন। তাই পুজো কমিটির কর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছিল, এ বারের মতো পুজোর জায়গা বদল করলে ভাল হয়। তিনি আরও জানান, জলাধারের কাঠামো নতুন তৈরি করতে কয়েক মাস সময় লাগবে। কিন্তু আর দু’মাস পরেই পুজো। তাই জায়গা বদলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
মেয়র এবং মেয়র পারিষদের অনুরোধে স্থান বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহম্মদ আলি পার্ক পুজো কমিটির সভাপতি হেমচাঁদ জৈন। প্রবীণ হেমচাঁদবাবু জানান, ওই পুজোর সূচনা হয়েছিল ৫০ বছর আগে। সে সময়ে পুজো হত পার্কের উল্টো দিকে মুনলাইট সিনেমা হলের কাছে, ৩৯ নম্বর তারাচাঁদ দত্ত স্ট্রিটে। সেখানে টানা ১৪ বছর পুজো চলে। পরে ওই জায়গায় পুজো করা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জায়গা বদল করতে বলা হয়। তৎকালীন নগরোন্নয়নমন্ত্রী প্রশান্ত শূর মহম্মদ আলি পার্কে পুজো করার অনুমতি দেন। সেই থেকে পার্কে পুজো হচ্ছে।
হেমচাঁদবাবু বলেন, ‘‘পুরসভাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, পার্কের নীচে জলাধারের কাজ হোক। পার্কের কাঠামো মজবুত না হলে বিপদ আমাদেরও। কারণ পুজোর সময় বহু মানুষ পার্কে উঠে প্রতিমা, মণ্ডপ দেখতে আসেন। সেই চাপে
পার্ক ভেঙে গেলে তো বড় বিপদ ঘটে যাবে।’’ এ সব বুঝে তাঁরা নিজেরাই স্থান বদল করতে উদ্যোগী হয়েছেন বলে জানান তিনি। হেমচাঁদবাবু আরও বলেন, ‘‘এ বারের মতো ফের তারাচাঁদ দত্ত স্ট্রিটে পুজো করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। শুক্রবার থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। পুলিশ এবং পুরসভাকেও সব জানানো হবে।’’ মহম্মদ
আলি পার্ক পুজো কমিটির এই স্থান বদল মানুষও মেনে নেবেন বলে মনে করছেন তাঁরা।