ঝলমলে: শহরে দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সেজেছে হাওড়া সেতুও। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
দৈনিক একশো টাকার টিকিটের জন্য দিতে হচ্ছে ১২০০-১৫০০ টাকা! তা সত্ত্বেও কিন্তু বৃহস্পতিবার টিকিট বিকিয়ে যেতে দেখা গেল। আইপিএল নয়, এক দিনের ম্যাচ নয়, টেস্ট ম্যাচের টিকিটের জন্য এমন হাপিত্যেশ শেষ কবে দেখেছে ইডেন? মনে করতে পারছেন না মাঠের কর্মী থেকে ক্রিকেটপ্রেমী কেউই। উপলক্ষ টেস্ট ক্রিকেট হলেও যত আকর্ষণ আটকে রয়েছে ওই গোলাপি রঙে।
আজ, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া দ্বাদশ আন্তর্জাতিক দিনরাতের এই টেস্ট ম্যাচ দেশের মাটিতে প্রথম বার হচ্ছে। তাই বাড়তি আকর্ষণ তো থাকবেই। প্রতিপক্ষ আবার প্রতিবেশী বাংলাদেশ। সুতরাং দেশের খেলার সাক্ষী হতে বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক ভক্তের মতোই সটান ইডেনে হাজির হয়েছেন মোজাম্বেল হক। মোজাম্বেলের কথায়, ‘‘এমন ঐতিহাসিক খেলা না দেখলে হয়! শুধু গোলাপি বলের টানেই ঢাকা থেকে এসেছি। কিন্তু এক দিনের টিকিটের জন্য ১২০০ টাকা চাইছে!’’ ইডেনের এক নম্বর গেটের সামনে অনেক ক্ষণ ধরে মুখ ভার করে ঘোরাঘুরি করছিলেন বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের প্রৌঢ় জাহিরুল হক। হৃদ্যন্ত্রের চিকিৎসা করাতে ছেলেকে নিয়ে এ দেশে এসেছেন তিনি। ইএম বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করার ফাঁকেই ছেলেকে নিয়ে প্রথম দিনের খেলা দেখতে চান জাহিরুল। কিন্তু টিকিট পাচ্ছেন না বলে আক্ষেপ করছিলেন। জাহিরুল বললেন, ‘‘বাংলাদেশে খেলা হলে মিস করি না। ইডেনে ঐতিহাসিক এই ম্যাচের প্রথম দিনেই সাক্ষী হতে চাই। টিকিট কোথায় পাব?’’
বাগবাজার থেকে আসা একদল যুবক কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন টিকিটের আশায়। জানতে পারলেন, এ দিন ইডেন থেকে শুধু অনলাইন বুকিংয়ের টিকিটই দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে টিকিট না কাটার জন্য আফশোস করছিলেন ওঁরা। এক জন বললেন, ‘‘গোলাপি বলটাই এ বারের আকর্ষণ। ঠিক করেছিলাম, আমরাও গোলাপি জামা পরেই আসব।’’ বিদেশের মাটিতে এসে অবশ্য নিরাশ হতে হয়নি জাহিরুলকে। মহামেডান মাঠের কাছে ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় দু’টি টিকিট পেয়ে বিশ্বজয়ের হাসি হেসে বললেন, ‘‘ব্ল্যাকে দুটো টিকিট ১৩০০ টাকায় পেলাম।’’
উৎফুল্ল: ম্যাচের টিকিট হাতে দুই পড়ুয়া। বৃহস্পতিবার, ইডেন গার্ডেন্সের সামনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
জাহিরুল সত্যিই জিতে গিয়েছেন। এমনটাই মত টিকিটের সন্ধানে ঘুরতে থাকা বালিগঞ্জের অলক সরকারের মতোই আরও অনেকের। অলক বলেন, ‘‘মহামেডান মাঠেরই আশপাশে একশো টাকার দৈনিক টিকিট ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভাবা যায়! আইপিএল দেখি ৬৫০ টাকায়। এতো সেই দামকেও হারিয়ে দিচ্ছে।’’ ম্যাচের আগের রাতেও ইডেন চত্বর জুড়ে এ রকমই টিকিটের কালোবাজারির ছবি চোখে পড়ল। তবু টিকিটের সন্ধানে ঘুরঘুর করা ভক্তদের উক্তি, গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্ট ক্রিকেট মাঠে দেখতেই হবে।
দিনরাতের ম্যাচ, তাই বলের রং গোলাপি, কিন্তু ক্রিকেটারদের হাতে যদি গোলাপি রিবন থাকত, আরও ভাল হত। এমনটাই দাবি ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর মতে, ‘‘ইডেনের মাঠে দু’দলের খেলোয়াড়েরা গোলাপি রিবন হাতে বাঁধলে সমাজের সর্বস্তরে স্তন ক্যানসার সচেতনতার বার্তাও ছড়াবে। অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচে এমনটাই হয়েছিল।’’
বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা নামছে। ইডেন থেকে কিছুটা দূরে শহিদ মিনারের চূড়োয় গোলাপি রংয়ের ছটা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমশ। নীল-সাদা শহরে ছড়িয়ে পড়া ওই রং বলে দিচ্ছিল আজ, শুক্রবার গোলাপি ঐতিহাসিক ম্যাচের মাহেন্দ্রক্ষণ আসন্ন।