Crime

গল্প ফেঁদেই কি বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে ডালকলের খুনি?

লালবাজার সূত্রের খবর, প্রথমে অপরাধ কবুল করলেও পরে শাকিল দাবি করে, পরশের স্ত্রীর সম্পর্কে কিছু গোপন কথা জেনে ফেলেছিলেন রাকেশ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০৪:১৪
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ঘটনাস্থলের যে লেখা ধরিয়ে দিয়েছে তাকে, এখন সেই লেখাকেই হাতিয়ার করে বাঁচতে চাইছে উল্টোডাঙার ডালকলে এক শ্রমিককে খুনের ঘটনায় ধৃত যুবক। পুলিশের দাবি, গল্প ফেঁদে সে কখনও বলেছে, খুনি অন্য কেউ। কখনও বলেছে, খুনের পরে ইচ্ছে করেই সে দেওয়ালে কয়েকটি কথা লিখেছিল। কখনও আবার দাবি করেছে, ডালকলের মালিকের স্ত্রীর সম্পর্কে গোপন কিছু জেনে ফেলেছিলেন খুন হওয়া শ্রমিক। ওই মহিলাই তাকে খুনের ‘সুপারি’ দিয়েছিলেন এবং তিনিই দেওয়ালে ওই কথাগুলি লিখতে বলেছিলেন!

Advertisement

কলকাতা পুলিশের ইস্টার্ন সাবার্বান ডিভিশনের ডিসি অজয় প্রসাদ বলেন, “ধৃত যুবক পুরনো অপরাধী। ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে ওর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। এক মহিলা পুলিশকর্মীকে ইট ছুড়ে মেরে মাটিতে ফেলে ইট দিয়ে মাথায় ও মুখে আঘাত করেছিল। এই খুন ঠান্ডা মাথায় করা। বিভ্রান্ত করতে এ সব বলছে।”

গত মঙ্গলবার রাতে উল্টোডাঙার ওই ডালকলে রাকেশ সাউ (৩০) নামে এক যুবক খুন হন। ডালকলের মালিক পরশ জয়সওয়াল দাবি করেন, রাকেশ তাঁর ডালকলেই প্রতি রাতে শুত। তাঁর কাছে কাজ না থাকলে অন্য জায়গায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করত। তদন্তে নেমে পুলিশ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সুমন শেখ ওরফে শাকিল খান নামে এক যুবককে দেশবন্ধু পার্ক থেকে গ্রেফতার করে। মৃতদেহটি যেখানে পড়ে ছিল, তার পাশেই দেওয়ালে লেখা ছিল, ‘সিআইডি অফিসার রাজ, সাবধান। তুমি বেশি চালাকি করলে নিজেই ফেঁসে যাবে। কানবালিয়া কে? আপনার ব্যাপারে আমি সব কিছু জানি।’ ওই হস্তাক্ষরের সঙ্গে মিলে যায় ঘটনাস্থলে পাওয়া একটি নোটবুকের হস্তাক্ষর। সেই নোটবুকটি শাকিলের। তাতে টাকার হিসেবের পাশাপাশি গানও লিখে রাখত শাকিল।

Advertisement

লালবাজার সূত্রের খবর, প্রথমে অপরাধ কবুল করলেও পরে শাকিল দাবি করে, পরশের স্ত্রীর সম্পর্কে কিছু গোপন কথা জেনে ফেলেছিলেন রাকেশ। সে সব কথা বাইরে বলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে রাকেশ ওই মহিলার থেকে প্রায়ই টাকা নিতেন বলে দাবি শাকিলের। সেই কারণেই নাকি রাকেশকে খুনের ‘সুপারি’ দিয়েছিলেন ওই মহিলা। শাকিল বলেছে, “খুনটা করলে দু’লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। তাই খুন করেছি।”

ডিসি জানান, দেওয়ালে ‘সিআইডি অফিসার রাজ, সাবধান। কানবালিয়া কে?’— এই কথাগুলির পাশাপাশি ডালকলের মালিকের স্ত্রীর নামে একাধিক কুরুচিকর মন্তব্য লেখা হয়েছিল। ডিসি-র কথায়, “যে সুপারি দিচ্ছে, তার নামেই কোনও খুনি এ সব লেখে?” এ বিষয়ে শাকিল বলেছে, “ওই মহিলা চিরকুটে কথাগুলো লিখে আমার হাতে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, কাজ হয়ে গেলে দেওয়ালে কথাগুলো লিখে দিতে।” সত্যিই কি কথাগুলো শাকিলকে দিয়ে লেখানো হয়? এক তদন্তকারী বললেন, “সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কাউকে যদি লিখতে বলাও হয়, সে হাতের লেখার সূত্রে ধরা পড়ার কথা ভাববে না? আসলে শাকিল ইচ্ছে করেই কানবালিয়ার নাম লিখেছিল। যাতে তার উপরেই পুলিশের সন্দেহ গিয়ে পড়ে। কয়েক দিন আগেই কানবালিয়ার সঙ্গে শাকিলের ঝামেলা হয়। সেই সময়ে রাকেশের সঙ্গেও তার হাতাহাতি হয়। সেই রাগ থেকেই এই খুন। অন্য গল্প বলাই যেত। কিন্তু শাকিল হয়তো ভাবেনি, আমরা নোটবুকটা পেয়ে যাব।”

ডালকলের মালিক পরশ জানান, তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গিয়েছেন। সেই পক্ষের দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ফের তিনি বিয়ে করেন বারাণসীর এক মহিলাকে। বছর আটচল্লিশের সেই মহিলা এবং পরশের দুই মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছেন। পরশ বলেন, “শাকিল অনেক কিছুই বানিয়ে বলছে। ওর দাবি যদি সত্যি হয়, তা হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement