অন্যের জমিতে বুঝে পা, সতর্ক মেয়র

গত ৫ সেপ্টেম্বর বিচারপতি টন্ডন নির্দেশ দেন, উদ্যানের চার দিকের বেড়া ভেঙে দিয়ে মালিককে তাঁর জমি ফিরিয়ে দিতে হবে। পুরসভা ও পুলিশকে ওই কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫০
Share:

কৌশল: পার্ক বাঁচাতে ফুটবল নিয়ে নেমে পড়লেন স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার, রিজেন্ট পার্ক এলাকার শরৎ স্মৃতি উদ্যানে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বেসরকারি জমিতে পার্ক তৈরি করতে গিয়ে চরম শিক্ষা হল কলকাতা পুরসভার। এ বার তাই ব্যক্তি-মালিকানাধীন জমিতে কোনও প্রকল্প করায় উৎসাহ দেখাবে না পুর প্রশাসন। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়ে দিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। পুর কমিশনার খলিল আহমেদকে তিনি জানিয়েছেন, সরকারি জমিতে কোনও প্রকল্প হলে অসুবিধা নেই। কিন্তু, বেসরকারি জমিতে পুরসভার কোনও প্রকল্প করতে হলে আগে মালিকের সম্মতি নিতে হবে। মালিককে পাওয়া না গেলে ওই জমিতে কিছু করা যাবে না।

Advertisement

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকায় বেসরকারি এক জমিতে কয়েক বছর আগে একটি পার্ক তৈরি করেছিল পুরসভা। পরে ওই পার্কের চার পাশে পাঁচিল দেওয়া হতেই জমির মালিক আদালতের দ্বারস্থ হন। অভিযোগ ওঠে, পদ্ধতি মেনে জমি অধিগ্রহণ না-করেই ওই উদ্যানের চার দিকে বেড়া দিয়ে খেলার মাঠ তৈরি করেছে পুরসভা। মে মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন পুর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন, জমিটি তার মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে। বিচারপতির সেই নির্দেশ পুরসভা না মানায় আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন জমির মালিক।

গত ৫ সেপ্টেম্বর বিচারপতি টন্ডন নির্দেশ দেন, উদ্যানের চার দিকের বেড়া ভেঙে দিয়ে মালিককে তাঁর জমি ফিরিয়ে দিতে হবে। পুরসভা ও পুলিশকে ওই কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিচারপতি জানিয়ে দেন, পদ্ধতি মেনেই জমি অধিগ্রহণ করতে হবে পুরসভাকে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও বিচারপতি আশা অরোরার ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা করেছিলেন এলাকার তিন বাসিন্দা। বুধবার ডিভিশন বেঞ্চ ওই আপিল মামলা খারিজ করে জানায়, মামলার আবেদনকারীদের অধিকারই নেই ওই মামলা করার। সেই মতো বুধবার পুর প্রশাসন এবং পুলিশ জানিয়ে দেয়, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ ওই ভাঙার কাজ শুরু হবে। ওই খবর পেয়ে এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা, যাঁরা পার্ক রাখার পক্ষে, এ দিন ১২টার আগে থেকেই ওই পার্কে ফুটবল খেলতে শুরু করে দেন। এলাকার এক দল মহিলাও পাঁচিল ভাঙার কাজ রুখতে তৈরি ছিলেন। হাজির ছিল কলকাতা পুলিশের বিশেষ বাহিনীও। বেলা গড়ালেও ভাঙার কাজ অবশ্য হয়নি।

Advertisement

কিন্তু কেন?

পুরসভা সূত্রের খবর, ভাঙতে যাওয়ার আগেই ওই জমির মালিকপক্ষের এক শরিক এ দিন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে জানান, জমিটি তাঁরা পুরসভাকেই বিক্রি করতে চান। এ বিষয়ে শোভনবাবু বলেন, ‘‘আমি ওঁদের
বলেছি, আমরা কেনার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু কাগজপত্র দেখে নিতে হবে।’’

এর পরেই এ দিন হাইকোর্টে বিচারপতি টন্ডনের আদালতে পুর প্রশাসন জানায়, শরৎ স্মৃতি উদ্যানের জমিটি তারা কিনে নিতে চায়। তাদের আইনজীবী বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, বেড়া ভাঙার নির্দেশ আপাতত স্থগিত রাখা হোক। পুর কর্তৃপক্ষের এই আবেদন এ দিন শোনেননি বিচারপতি টন্ডন। তিনি পুরসভার আইনজীবীকে জানিয়ে দেন, আজ, শুক্রবার আদালত অবমাননার মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। তখনই তিনি দু’পক্ষের বক্তব্য শুনবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement