দাবিদার: ধর্নার ৭০০তম দিনেও স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে অনড় চাকরিপ্রার্থীরা। রবিবার, গান্ধী মূর্তির পাদদেশে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
এসএসসি-র নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন দেখতে দেখতে ৭০০ দিনে পড়ল রবিবার। স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে অনড় রয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সেই সঙ্গে তাঁদের দাবি, যাঁরা বাঁকা পথে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের চাকরি বাতিল করলেই হবে না, একই সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়াও চালাতে হবে। কারণ, তাঁরা মনে করেন, এসএসসি-র বেআইনি নিয়োগের জন্যই বহু যোগ্য প্রার্থী এত দিন ধরে বঞ্চিত রয়েছেন।
চাকরিপ্রার্থীরা জানান, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রথমে প্রেস ক্লাবে ২৯ দিন তাঁদের অনশন চলে। এর পরে সল্টলেকের করুণাময়ীতে ১৮৭ দিনের ধর্না অবস্থান। সেখান থেকে আন্দোলন উঠে আসে ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে। সেখানে বসার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি পাওয়া পর্যন্ত কিছু দিন অবস্থান বন্ধ ছিল। অনুমতি মেলার পরে টানা ৪৮৬ দিন ধরে ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থান বিক্ষোভ চলছে তাঁদের।
এ দিন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে মহিলা চাকরিপ্রার্থীরা কালো পোশাক পরে আন্দোলন করেন। সেই সঙ্গে মঞ্চে ঝোলানো ছিল ভুয়ো ওএমআর শিটের প্রতিলিপি। হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তে নবম থেকে দশমের চাকরিপ্রার্থীদের ৯৫২টি গরমিল থাকা ভুয়ো ওএমআর শিট পাওয়া গিয়েছিল। সেই ৯৫২টি ওএমআর শিটের মধ্যে ১৫ জন চাকরিপ্রার্থীর নম্বর বেড়েছিল আদালতের নির্দেশে। তাই তাঁদের বাদ দিয়ে ৯৩৭ জনের মধ্যে ৮০২ জনের চাকরির সুপারিশপত্র সম্প্রতি বাতিল করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। একই ভাবে ১৯১১ জন গ্রুপ-ডি কর্মীর চাকরিও বাতিল করেছে এসএসসি।
গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থানরত নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, শুধুমাত্র ওএমআর শিটের মাধ্যমে যে বেআইনি নিয়োগ হয়েছে তা-ই নয়, আরও নানা ভাবে বেআইনি নিয়োগ হয়েছে। সে সবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে। তাঁদের অভিযোগ, দুর্নীতির সমস্ত দিক এখনও উন্মোচিত হয়নি। অভিষেক সেন নামে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘র্যাঙ্ক টপকেও অনেকে চাকরি করছেন। ইতিহাসে ওবিসি (বি) বিভাগে আমার র্যাঙ্ক ছিল ৩৩। কিন্তু আমি তথ্যের অধিকার আইনে জেনেছি, একই বিষয়ের একই বিভাগে যাঁর র্যাঙ্ক ছিল ৫৪, তিনি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। এই সব বেআইনি নিয়োগও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।’’
মাতঙ্গিনী হাজরার পাদদেশে আবার বসে আছেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। উচ্চ প্রাথমিকের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে ন’বছর অতিক্রান্ত। এখনও পর্যন্ত মেধা তালিকা প্রকাশ হয়নি। ‘পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চ’-এর সহ-সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘গত বছর নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে উচ্চ প্রাথমিকের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে বলেছিল হাই কোর্ট। তার পরেও দু’মাস কেটে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত মেধা তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন। আর কবে নিয়োগ হবে?’’
যদিও কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন,‘‘হাই কোর্টকে জানিয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যেই উচ্চ প্রাথমিকের মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। অন্য দিকে, গ্রুপ ডি পদে যাঁদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে এবং তার ফলে সেখানে যত শূন্য পদ তৈরি হয়েছে, সেগুলিতে নিয়োগের জন্য কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া আদালতের নির্দেশে তিন সপ্তাহের মধ্যেইশুরু হবে।’’