মস্তিষ্ক জেগে উঠবে ভেবেই সংরক্ষণ?

শুভব্রতকে জেরা করে বেরিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ নতুন এক চমকপ্রদ তথ্য। পুলিশ জানায়, শুভব্রত তাদের অনুরোধ করেছেন, মায়ের মস্তিষ্কটি যেন রেখে দেওয়া হয়।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৫৪
Share:

আদালতের পথে শুভব্রত। শুক্রবার। ছবি: শৌভিক দে

কেন?

Advertisement

এই প্রশ্নটাই বৃহস্পতিবার দিনভর তাড়া করে বেড়িয়েছে পুলিশের তদন্তকারীদের। মৃত্যুর খবর গোপন রেখে মৃতের পেনশন তুলে নেওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। কিন্তু বেহালার শুভব্রত মজুমদার তিন বছর ধরে মায়ের মৃতদেহ ফ্রিজারে সংরক্ষণ করলেন কেন? শুধুই কি টাকার লোভ, নাকি এর পিছনে রয়েছে জটিল কোনও মানসিক বিকার?

শুভব্রতকে জেরা করে বেরিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ নতুন এক চমকপ্রদ তথ্য। পুলিশ জানায়, শুভব্রত তাদের অনুরোধ করেছেন, মায়ের মস্তিষ্কটি যেন রেখে দেওয়া হয়। কারণ, শুভব্রতের বিশ্বাস, ‘ক্রায়োনিক্স’ নামে এক বিশেষ পদ্ধতিতে ওই মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করলে ভবিষ্যতে তা আবার সচল হয়ে উঠতে পারে! শুভব্রতের এই অনুনয় শুনে তদন্তকারীরা হতবাক! শুভব্রত পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ওই পদ্ধতিতে দেহ সংরক্ষণে বিশ্বাস করতেন তাঁর মা বীণাদেবীও। নিজের দেহ সংরক্ষণের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছিলেন তিনি। সেই কাজে আমেরিকার অ্যারিজোনার একটি গবেষণা সংস্থার সাহায্য নিয়েছিলেন শুভব্রত। শুক্রবার জামিন পেয়ে গিয়েছেন তিনি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালে বেহালার জেমস লং সরণির বাড়িতে হানা দিয়ে ফ্রিজার থেকে বীণাদেবীর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, তিন বছর আগে তাঁর মৃত্যু হলেও মায়ের দেহ সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন ছেলে। দফায় দফায় জেরার পরে অনেক অজানা তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই সব তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, নিছক নিজের খেয়ালে মাইক্রোবায়োলজি এবং দেহ সংরক্ষণের প্রযুক্তি সংক্রান্ত কিছু বই পড়েই শুভব্রত এমন কাজ করেননি।

মরণের পরে

ক্রায়োনিক্স কী?

• অতি শীতল তাপমাত্রায় (প্রায় -১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) মৃতদেহ সংরক্ষণের বিশেষ পদ্ধতি। পরিচিত ‘ক্রায়োপ্রিজার্ভেশন’ নামে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যদি কোনও দিন মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হয়, তখন যেন বাঁচিয়ে তোলা যায় প্রিয়জনদেরও— সেটাই উদ্দেশ্য।

প্রথম ক্রায়োপ্রিজার্ভেশন

• ১৯৬৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্বের শিক্ষক জেমস বেডফোর্ডের দেহ প্রথম এ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হয়। অ্যারিজোনার একটি সংস্থা তা সংরক্ষণ করে।

আইন কী বলে?

• ভারত-সহ বেশির ভাগ দেশেই এ ভাবে দেহ সংরক্ষণ আইনসম্মত নয়। ২০১৬ সালে লন্ডনে ১৪ বছরের মেয়ের দেহ এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণের আর্জি জানিয়েছিলেন মা। ব্রিটিশ হাইকোর্ট তা মঞ্জুর করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় সংরক্ষণের জন্য।

পুলিশি সূত্রের খবর, জেরায় শুভব্রত জানিয়েছেন, অ্যারিজোনার ওই সংস্থাটি ‘ক্রায়োনিক্স’ পদ্ধতিতে মৃত মানুষের দেহ, বিশেষ করে মস্তিষ্ক সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। কারণ, ওই সংস্থা বিশ্বাস করে, মস্তিষ্কের মৃত্যু হয় না। নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেও ফের তাকে চালু
করা যায়।

শুভব্রতের দাবি, বছর পাঁচেক আগে এটা জানতে পেরে বীণাদেবী এবং তিনি, দু’জনেই আগ্রহী হয়ে ওই সংস্থার ওয়েবসাইট দেখেন। তার পরে ওই সংস্থার সদস্য হয়ে তাদের ওয়েবসাইট ঘেঁটে প্রচুর পড়াশোনাও করেছেন মা-ছেলে। চ্যাটের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন শুভব্রত। মায়ের মৃত্যুর পরে শুভব্রত তাঁর দেহ সংরক্ষণ করেন তাদের পরামর্শেই। তার পরে ওই সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন তিনি।

জেরায় শুভব্রত পুলিশকে জানান, ওই সংস্থার মতো তাঁরও দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী দিনে চিকিৎসা ব্যবস্থার আরও অগ্রগতি ঘটলে মৃত মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও ফের সচল করা সম্ভব হবে। আর সে-ভাবেই মৃত মানুষকে ফের বাঁচিয়ে তোলা যাবে।

পুলিশি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, শুভব্রতের বক্তব্যের সঙ্গে মিল আছে ওই সংস্থার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যের। দেহ সংরক্ষণ বিষয়ে তাঁর খুঁটিনাটি জ্ঞান দেখে কলকাতা পুলিশের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা অবাক হয়ে গিয়েছেন।

‘‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা পুলিশি জেরার সামনে অনর্গল মার্কিন উচ্চারণে ইংরেজিতে নিজের বিশ্বাস নিয়ে যুক্তির জাল বুনে গিয়েছেন শুভব্রত। যা এক কথায় অভাবনীয়,’’ বলেন ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ-পশ্চিম) নীলাঞ্জন বিশ্বাস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement