তিলজলায় সাত বছরের শিশুকন্যাকে যৌন হেনস্থা এবং খুনের ঘটনার এক মাস পূর্ণ হল বুধবার। প্রতীকী ছবি।
তিলজলায় সাত বছরের শিশুকন্যাকে যৌন হেনস্থা এবং খুনের ঘটনার এক মাস পূর্ণ হল বুধবার। কিন্তু, এখনও চার্জশিট জমা পড়েনি আদালতে। যা নিয়ে এ দিন উষ্মা প্রকাশ করলেন ওই শিশুটির পরিজনেরা। তাঁদের বক্তব্য, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সব দিক যেখানে পরিষ্কার হয়েই গিয়েছে, সেখানে এত সময় লাগছে কেন? নিহত শিশুটির বাবার কথায়, ‘‘আমরা অপরাধীর কড়া শাস্তি চাই। ন্যায় বিচার পেতে গিয়ে এতটা দেরি হওয়া মানে বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়া।’’
গত ২৬ মার্চ বাড়ির ময়লা ফেলতে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় তিলজলার বাসিন্দা ওই শিশুটি। অভিযোগ, তিলজলা থানার পুলিশ প্রথমে নিখোঁজ ডায়েরিকে গুরুত্ব দেয়নি। পরে ওই বহুতলে পুলিশি তল্লাশি শুরু হলে তেতলার ফ্ল্যাট থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে জানা যায়, ময়লা ফেলে ফ্ল্যাটে ফেরার সময়ে অলোক কুমার নামে অভিযুক্ত শিশুটির হাত ধরে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে যায় এবং খুন করে। অভিযোগ, তার উপরে যৌন নির্যাতনও চালায় সে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে তিলজলা। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং আগুন লাগানো হয়। ঘটনার তদন্তে কলকাতায় আসেন জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্ক কানুনগো। ওই তদন্ত নিয়ে প্রকাশ্যেই বিরোধ বাধে জাতীয় এবং রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সনের মধ্যে।
এর মধ্যেই তদন্তকারীদের সঙ্গে কথা বলে প্রিয়ঙ্ক অভিযোগ তোলেন। তাঁর দাবি, সেখানে ক্যামেরায় সব রেকর্ড করা হচ্ছিল বলে তিনি আপত্তি জানালে তিলজলা থানার তৎকালীন ওসি বিশ্বক মুখোপাধ্যায় তাঁকে মারধর করেন। তাঁর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ওসির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তাঁকে সরিয়ে দেয় লালবাজার।
এর মধ্যেই গত সপ্তাহে তিলজলায় শিশু খুন এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে রাজ্য এ ব্যাপারে কী কী পদক্ষেপ করেছে, তা লিখিত ভাবে জানাতে। এ ক্ষেত্রে সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত বলেও মনে করে কমিশন।
রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় বুধবার বলেন, ‘‘আমরাও বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট নিচ্ছি। তদন্ত হয়েই এসেছে।’’ লালবাজারের কর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্ত করছে গোয়েন্দা বিভাগ। কেন্দ্রীয় কমিশনের অভিযোগকারী শীর্ষ কর্তা এবং অভিযুক্ত পুলিশকর্মীকে ডেকে পাঠানো ছাড়াও তদন্তে ক্যামেরার ছবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব দিক থেকে নিশ্চিত হয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করতেই চার্জশিটের বিষয়ে বুঝে পদক্ষেপ করতে হচ্ছে। গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘সব ঠিক থাকলে এই ঘটনায় চলতি মাসের শেষে চার্জশিট জমা পড়তে পারে।’’