ফাইল চিত্র
জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করা নিয়ে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। সেই বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা পুলিশ এলাকার জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা পলাতক অভিযুক্তদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চাইল কমিশন। পাশাপাশি, দাগি দুষ্কৃতীদের নামের তালিকা তৈরি করে তাদের বর্তমান অবস্থা কী, তারও বিস্তারিত তথ্যভাণ্ডার তৈরি করছে কলকাতা পুলিশ।
লালবাজার সূত্রের খবর, যে সব পলাতক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, তাদের নামের তালিকা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। লালবাজার থানাগুলির কাছে তা পাঠিয়ে দিয়েছে।
থানাগুলিকে প্রতি সপ্তাহেই আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত রিপোর্ট লালবাজারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে পাঠাতে হয়। জামিন-অযোগ্য ধারায় সেই সপ্তাহে কত জন গ্রেফতার হয়েছে এবং কত জন পলাতক, তারও উল্লেখ থাকত রিপোর্টে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নতুন যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে, তাতে সাপ্তাহিক রিপোর্টের সঙ্গে জামিন-অযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত পলাতক দুষ্কৃতীদের নামের তালিকা ও তাদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলার খতিয়ান পৃথক ভাবে চাওয়া হয়েছে।
এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘আমাদের ধারণা, জামিন-অযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত দুষ্কৃতীরা কিসের আসামি, তা জেনে নিতে চাইছে কমিশন। যাতে গাড়ি দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত চালকের সঙ্গে খুনের পলাতক আসামি বা দাগি দুষ্কৃতীর মধ্যে ফারাক বোঝা যায়। দাগিদের ধরার উপরেই জোর দিচ্ছে কমিশন। কড়াকড়ির জেরে সাধারণ অভিযুক্তেরা যাতে হেনস্থা না হন, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।’’
এ দিকে, দাগি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে ডেপুটি নির্বাচন কমিশনারও দাগি দুষ্কৃতী ও ভোটে গোলমাল পাকাতে পারে, এমন লোকজনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে বলেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার লালবাজারে বৈঠক করেন পুলিশের শীর্ষ কর্তা-সহ বিভিন্ন ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনারেরা।
সেই বৈঠক থেকেই প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ভোটের দিন গণ্ডগোল পাকাতে পারে, এমন দুষ্কৃতীদের তালিকা তৈরি করতে হবে। সেই তালিকা ধরে ওই দুষ্কৃতীদের বর্তমানে কী অবস্থা, তার বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করতে হবে থানাগুলিকে। সেই সঙ্গে ওই দাগি দুষ্কৃতীরা যাতে গোলমাল না পাকায়, সে ব্যাপারে তাদের সতর্ক করতেও বলা হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের দিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে নিতেও বলা হয়েছে প্রতিটি থানাকে।
বৃহস্পতিবার লালবাজারে ওই বৈঠকের পরে থানাগুলির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন প্রতিটি ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনারেরা। সেখানে থানার আধিকারিকদের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার নিদান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশগুলির বিষয়ে জানানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, লালবাজারের তরফে থানাগুলিকে বলা হয়েছে, গত নির্বাচনে কোথায় গোলমাল হয়েছিল এবং কারা তার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তার রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। গত লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে গোলমাল বা প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কি না, তা-ও জানাতে বলা হয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, সামনের সপ্তাহেই শহরে আসার কথা নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের। তাই দাগি দুষ্কৃতী, ভোটে হাঙ্গামাকারী এবং স্পর্শকাতর বুথগুলি সম্পর্কে সব তথ্য জোগাড় করে রাখা হচ্ছে।