—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
শহরের বিভিন্ন মেট্রোপথগুলির পারস্পরিক সংযুক্তিই যে যাত্রী টানার প্রধান চাবিকাঠি, তা দেখাচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। অতিমারি পরিস্থিতির পরে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর সম্প্রসারণও দৈনিক হারে তেমন ভাবে যাত্রী টানতে পারেনি। তুলনায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো দৈনিক গড়ে ৩০ হাজারেরও বেশি যাত্রী জোগান দিচ্ছে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয়। বস্তুত, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেডের মধ্যে সফর করা যাত্রীদের তুলনায় বেশি যাত্রী মিলছে সংযুক্ত সফরে। মেট্রো সূত্রের খবর, হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেডের মধ্যে যদি দৈনিক গড়ে ৫০ হাজার যাত্রী সফর করে থাকেন, তাঁদের মধ্যে সংযুক্ত সফরের যাত্রীর সংখ্যা থাকছে অর্ধেকের বেশি। ওই যাত্রীরা জানাচ্ছেন, বাসে বা গাড়িতে দীর্ঘ পথে যানজটের ঝক্কি পোহানোর থেকে মেট্রোর মসৃণ সফর তাঁদের কাছে অনেক বেশি ভরসাযোগ্য হয়ে উঠেছে। যদিও এসপ্লানেড থেকে হাওড়া ময়দান পথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মেট্রোর ব্যবস্থাপনার কিছু খামতি ছাড়াও একাধিক বিকল্প থাকার কারণে সব যাত্রীকে মেট্রোমুখী করা যায়নি।
পরিবহণ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, শহরে নির্দিষ্ট দু’টি জায়গার মধ্যে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোন মাধ্যমে তুলনামূলক ভাবে স্বস্তিতে ও আরামে সফর করা যাবে, তাকেই অগ্রাধিকার দেন যাত্রীরা। যেমন, হাওড়া ময়দান-এসপ্লানেড রুটে ধর্মতলা থেকে হাওড়ায় আসার জন্য মিনিবাসে ভাড়া দিতে হয় ১৫ টাকা। বেসরকারি বাসে ওই ভাড়া ১০ টাকা। মেট্রো চালুর পরে বড় বাসের যাত্রী সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম হ্রাস পেলেও মিনিবাসের যাত্রী কমেছে অনেক বেশি হারে।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৫ থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো থেকে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে সফর করেছেন মোট প্রায় ৪.৬৫ লক্ষ যাত্রী। এর মধ্যে হাওড়া থেকে সফর করেছেন ২.৩৮ লক্ষ যাত্রী, হাওড়া ময়দান থেকে ২.১১ লক্ষ। ওই যাত্রীদের মধ্যে দমদমে গিয়েছেন ২৫ হাজার জন, কালীঘাটে ২১ হাজার, দক্ষিণেশ্বরে ১৪ হাজার ৩০০ এবং কবি সুভাষে ১৩ হাজার। তুলনায় একক ভাবে ওই সময়-পর্বে (১৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ) ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় যাত্রী সংখ্যা ছিল তিন লক্ষের কাছাকাছি। সংযুক্ত সফরের সমস্যা মেটাতে সম্প্রতি এসপ্লানেডে সংযুক্ত পথের সাবওয়েতে ‘কিউ ম্যানেজার’ বা পথ আলাদা করার জন্য ইস্পাতের স্তম্ভ এবং রিবনের বেড়া বসিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। তাতে দু’দিকের যাত্রীদের মুখোমুখি সংঘাত কমেছে। যা থেকে স্পষ্ট, যাত্রী টানার আসল চাবিকাঠি ঝক্কিবিহীন সংযুক্ত সফরের সুবিধা। এই একই মডেল অনুসরণ করে সাফল্য এসেছে দিল্লি মেট্রোতেও।
পরিবহণ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সংযুক্ত সফরের সুবিধা সড়ক পরিবহণের উপরে চাপ অনেকটাই কমাতে পারে। এর জন্য ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ক্ষেত্রে এসপ্লানেড এবং শিয়ালদহের মধ্যে সংযুক্তি ছাড়াও ওই মেট্রোর সঙ্গে নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোপথ যুক্ত করার কাজ দ্রুত শেষ করা জরুরি। শহরের নির্মীয়মাণ এবং প্রস্তাবিত মেট্রোপথগুলির পারস্পরিক সংযুক্তির উপরেই নির্ভর করবে শহরের গণপরিবহণ উন্নত হওয়ার বিষয়টি।