প্রতীকী ছবি।
আমজনতার কেউ নন, খোদ কলকাতা পুরসভা অভিযোগ জানিয়েছিল হেয়ার স্ট্রিট থানায়। কিন্তু অভিযোগ জমা নেওয়ার ৭২ দিন পরে এফআইআর রুজু করে থানা। তার পরে সেই তদন্ত শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর। তারও সাড়ে তিন বছর পরে চার্জশিট পৌঁছেছে আদালতে!
‘এত সময়’ নিয়ে চার্জশিট তৈরি করার পরেও তাতে প্রচুর ভুল খুঁজে পেয়েছেন কলকাতা পুর আদালতের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপকুমার অধিকারী। সেই কারণেই ওই তদন্তের দায়িত্বে থাকা সাব-ইনস্পেক্টর এবং ওসি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল)-কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ব্যবস্থা নেওয়ার পরে সে ব্যাপারে পুর আদালতে রিপোর্টও দাখিল করতে হবে ডিসি-কে।
আদালতের নির্দেশে ওই তদন্তকারী অফিসার, ওসি এবং তদন্তের তদারকির দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনারকে শো-কজ় করা হয়েছে। তাঁদের আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে এর জবাব দিতে হবে।
আদালত সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের মে মাসে এজরা স্ট্রিটে একটি অবৈধ নির্মাণের কথা জানতে পারে পুরসভা। জায়গাটি পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করার নোটিস দেওয়া হলেও নির্মাণ চালু ছিল। তার পরেই হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানান পুরকর্তারা। সেই অভিযোগ জমা নেওয়া হলেও সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর রুজু করা হয়নি। এফআইআর রুজু হয় ওই বছরের অগস্ট মাসে। সম্প্রতি ওই মামলার চার্জশিট পুর আদালতে জমা পড়েছে। তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে বিচারক দেখেন, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি তদন্ত শেষ করে চার্জশিট তৈরি হলেও তা এত দিন পুলিশের টেবিলেই পড়ে ছিল।
আদালত সূত্রের খবর, তদন্তের নামে কার্যত প্রহসন হয়েছে বলা যেতে পারে। নির্মাণের মশলার গুণগত মান পরীক্ষা করানো হয়নি এবং নকশাও জোগাড় করা হয়নি। জমিটির মালিকানা কার নামে, তারও উল্লেখ নেই। অবৈধ নির্মাণের ফলে কী হতে পারে, সেই সম্পর্কে পুরসভা, ট্র্যাফিক পুলিশ কারও কোনও বক্তব্য নেই। পুরসভার যে আধিকারিক অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাঁরও বয়ান নেই। তাঁকে চার্জশিটের প্রতিলিপিও দেওয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসে কলকাতা পুলিশের একাধিক থানার বিরুদ্ধে এমন গা-ছাড়া ভাবে তদন্ত করার অভিযোগ উঠেছে পুর আদালতে। এর জন্য বহু অফিসারকেই শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ওই শাস্তির ভয়েই হয়তো দীর্ঘদিন ফাইলচাপা পড়ে থাকা চার্জশিট আদালতে যাচ্ছে। ‘‘অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের মনোভাব কী, তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। তবে আশা করা যায়, শাস্তির ভয়ে এ বার কিছুটা বদল আসবে,’’ মন্তব্য এক পুলিশ আধিকারিকের।