স্তব্ধ: শ্রীভূমির ভিড়ের চাপে প্রতিপদেই থমকাল ভিআইপি রোডের যান চলাচল। রবিবার সন্ধ্যায় উল্টোডাঙা থেকে বিমানবন্দরগামী রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে যানবাহন। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
উৎসবের আবহে যেন ত্রাসের আর এক নাম ‘শ্রীভূমি’। যে পুজো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কিংবা অনুরোধকেও তোয়াক্কা করে না। তাই বার বার একই অভিযোগে অভিযুক্ত হয় তারা। অথচ, ভিড় ও যানজট নিয়ে গত বছরেও শ্রীভূমির পুজো উদ্যোক্তাদের সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বারেও দু’দফায় তাঁদের একই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তাও যে শ্রীভূমি-আতঙ্ক কাটাতে পারল না, তা রবিবার প্রতিপদে তালগোল পাকানো যান-ব্যবস্থাতেই পরিষ্কার হয়ে গেল।
এমন অব্যবস্থা কেন? উত্তর পেতে শ্রীভূমির পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা তথা রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকে ফোন এবং মেসেজ করা হলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি। সব মিলিয়ে পুজোর আগামী দিনগুলি নিয়ে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে শ্রীভূমি-আতঙ্ক।
প্রতিপদের সন্ধ্যা। ভিআইপি রোডের বিমানবন্দরমুখী রাস্তায়, উল্টোডাঙা উড়ালপুলের উপরে দীর্ঘ ক্ষণ যানজটে আটকে রইলেন বিমানযাত্রী, অসুস্থ রোগী, শিশু ও বয়স্কেরা। কলকাতা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ঘন ঘন বাজল ফোন। বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের কাতর প্রশ্ন, ‘‘বিমান ধরব। যানজটে আটকে। কোন পথে যাব?’’ শ্রীভূমির জন্য ভিআইপি এবং ইএম বাইপাস তখন কার্যত স্তব্ধ। কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়, বাইপাসের দিক থেকে এলে চিংড়িঘাটা উড়ালপুল হয়ে নিউ টাউন ধরে যেতে হবে বিমানবন্দরে।
সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ কন্ট্রোল রুমে অনেকেই ফোন করে জানতে পারেন, ভিআইপি রোডের বিমানবন্দরগামী রাস্তা স্তব্ধ। সার সার গাড়ি বেঙ্গল কেমিক্যালের অদূরে একটি বেসরকারি হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। কলকাতা পুলিশের তরফে ভিআইপি রোডের ট্র্যাফিক গতিশীল করতে ক্রমাগত ফোন করা হয়। কন্ট্রোল রুম থেকে বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হয় চিংড়িঘাটা উড়ালপুল ধরতে। উল্টোডাঙা থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছনোর চেষ্টা করলে বিমান ধরতে না পারার আশঙ্কা রয়েছে বলেও কন্ট্রোল রুম থেকে অনেকে জানতে পারেন। ওই সময় দমদম পার্ক থেকে লেক টাউন অভিমুখের গাড়িও বেশ কিছু ক্ষণ যানজটে আটকে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাস্তা পারাপারও বন্ধ হয়।
শনিবার, মহালয়ার রাতেই শ্রীভূমির মণ্ডপ খুলে গিয়েছে। ওই রাত থেকেই ভিড় শুরু হয়েছিল। সেই ভিড় নেমে আসে সার্ভিস রোডে। দক্ষিণদাঁড়ির কাছে সার্ভিস রোড বন্ধ করে দিতে হয়। কলকাতা পুলিশের দাবি, রবিবার লেক টাউনে ঘড়িমোড়ের কাছে ভিড় জমে যাওয়ায় যানজট তৈরি হয়। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের দাবি, সন্ধ্যায় যানজট ছিল ঠিকই, কিন্তু গাড়ি থমকে যায়নি। রাতে যানজট অল্প থাকলেও গাড়ির গতি বাড়ানো গিয়েছে। যদিও বাস্তব চিত্র ছিল আলাদা। রাত ন’টার পরেও ওই পথে ঘণ্টাখানেক এক জায়গায় গাড়ি দাঁড়িয়ে থেকেছে বলে জানাচ্ছেন আটকে থাকা গাড়ির যাত্রীরাই।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতি বার একই সমস্যা। বিশেষত কলকাতার অভিমুখ থেকে বিমানবন্দরগামী রাস্তায় ভিআইপি রোডে চরম হেনস্থা হতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনেও যার পরিবর্তন হয় না। বরং এ বছর পুজো আরও এগিয়ে আসায় এই যন্ত্রণা আরও দীর্ঘায়িত হবে ভেবেই শঙ্কিত মানুষ। বাগুইআটি, তেঘরিয়া কিংবা কৈখালির বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই ঘুরপথে যশোর রোড হয়ে দমদমের ভিতরের রাস্তা দিয়ে চলাচল শুরু করেছেন। ফলে ওই সব রাস্তাতেও বাড়ছে গাড়ির চাপ।
পুলিশ ও পুজো কমিটির ব্যাখ্যা, বহু মানুষ ছুটির দিনে শ্রীভূমির মণ্ডপ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। তাঁদের অনেকেই গাড়িতে এসেছেন। ফলে গাড়ির চাপ বেড়েছে। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের সম্পাদক দিব্যেন্দু গোস্বামীর বক্তব্য, ‘‘এত বিখ্যাত পুজো, ভিড় তো হবেই। প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক নামিয়েছি। পুলিশের সঙ্গেও সমন্বয় রাখা হচ্ছে।’’
বিধাননগর পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে মালবাহী গাড়ি ও দূরপাল্লার বাস পুজোর সময়ে যশোর রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।