প্রতীকি ছবি
করোনা পরিস্থিতি শুরু হতেই প্রবল আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছিল কলকাতা পুরসভা। কোষাগারের অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে, কর্মীদের বেতন দেওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছিল সংশয়। বিল্ডিং, অ্যাসেসমেন্ট, বিনোদন, পার্কিং— গত দু’বছরে সমস্ত বিভাগেরই আয় গিয়ে ঠেকে প্রায় তলানিতে। তবে বর্তমানে এরই মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স বিভাগ। পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে ট্রেড লাইসেন্স বিভাগ আয় করেছিল ৪৭ কোটি ১১ লক্ষ টাকা। ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে যা কমে দাঁড়ায় ৪২ কোটি ২১ লক্ষ টাকা। ২০২১-’২২ অর্থবর্ষ শেষ হতে এখনও মাস তিনেক বাকি। তবে এর মধ্যেই বর্তমান অর্থবর্ষের ডিসেম্বর পর্যন্ত লাইসেন্স-ফি বাবদ আদায় হয়েছে ৪৮ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা।
পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছর করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পরে সব থেকে কমে গিয়েছিল লাইসেন্স বিভাগের আয়। বকেয়ার পাহাড় জমতে থাকায় আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল পুরসভা। বকেয়া লাইসেন্স-ফি আদায়ে কী করণীয়, তা ঠিক করতে গত বছরের অক্টোবরে একটি সমীক্ষা শুরু করেছিল পুর লাইসেন্স বিভাগ। ওই বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা লুকিয়ে ব্যবসা করেন। পুরসভাকে ট্রেড লাইসেন্স-ফি দিতে চান না। আমরা গত এক বছরে ঠিকানা ধরে ধরে সেই সমস্ত কর ফাঁকি দেওয়া ব্যবসায়ীর কাছে গিয়েছি। করের অঙ্কটা পরিমাণে অল্প হলেও তাঁরা অনেকে নিয়মকানুন জানতেন না। কী ভাবে অনলাইনে কর জমা দেওয়া যাবে, সে বিষয়েও ব্যবসায়ীদের ধরে ধরে বোঝানো হয়েছে।’’ ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘এত চেষ্টা সত্ত্বেও শহরে এখনও প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার লক্ষ ব্যবসায়ী পুরসভাকে ট্রেড লাইসেন্স-ফি দেন না।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, লাইসেন্স বিভাগে খাতায়কলমে রয়েছেন প্রায় তিনশো জন কর্মী। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ৮৫ জন এখন অন্য দফতর সামলাচ্ছেন। রয়েছেন মাত্র ২১৫ জন। এত কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে লাইসেন্স-ফি আদায় করা কঠিন বলে জানাচ্ছেন বিভাগীয় আধিকারিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, বিভাগে কর্মী-সংখ্যা না বাড়ালে কর আদায় বাড়ানো অসম্ভব।
তবে ওই অল্প সংখ্যক কর্মী নিয়েই লাইসেন্স বিভাগ যে ভাবে বকেয়া আদায়ে সচেষ্ট হয়েছে, তাতে ওই বিভাগের তারিফ করছেন পুরসভার শীর্ষ কর্তারা। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘সদিচ্ছা থাকলে যে কাজ করা যায়, তা প্রমাণ করে দেখিয়েছে লাইসেন্স বিভাগ। অন্যান্য দফতরের কর্মীরাও উদ্বুদ্ধ হবেন।’’
বকেয়া আদায়ে কী ভাবে এগিয়েছিল লাইসেন্স-ফি বিভাগ?
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই বিভাগের চিফ ম্যানেজার, ম্যানেজার থেকে শুরু করে অন্যান্য আধিকারিক ও কর্মীরা গত এক বছরে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডে যান। যে সমস্ত ব্যবসায়ীর ট্রেড লাইসেন্স-ফি বকেয়া রয়েছে, তাঁদের সতর্ক করা হয়। ওই ব্যবসায়ীদের সমস্যা কোথায়, তা জানতে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হয়।
লাইসেন্স বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বহু ক্ষেত্রেই উদাসীনতা ও অজ্ঞতার কারণে ব্যবসায়ীরা বকেয়া লাইসেন্স-ফি জমা দেননি। কী ভাবে অনলাইনে তা জমা দেওয়া যাবে, সে বিষয়ে আমাদের কর্মী ও আধিকারিকেরা তাঁদের বুঝিয়েছেন। সেই কারণেই ফি জমার পরিমাণ বেড়েছে।’’ পুর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রেই যাঁর নামে ব্যবসা, তিনি মারা যাওয়ার পরে সেই লাইসেন্সের নবীকরণ করা হয় না। আবার লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জটিলতা থাকায় অনেকে পুরসভার কাছে আবেদনই করেননি। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘লাইসেন্স বিভাগের এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে বকেয়া আদায় আরও কী ভাবে বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে কর্মীদের বলা হয়েছে।’’