উৎসবপ্রেমীদের ঢলে জমজমাট বড়দিনের শহর

শীত পড়ুক না পড়ুক, এটা বড়দিন! হতে পারে তাপমাত্রার পারদে ডিসেম্বরের আমেজ এখনও গাঢ় হয়নি তত। রং-বেরঙের জ্যাকেট, সোয়েটারের কেতায় মরসুমি ফ্যাশনে ঝলমলিয়ে ওঠার বাসনাতেও তাই বাদ সাধছে রীতিমতো। তবু বড়দিন বলে কথা!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩৪
Share:

ভিড়ে থিকথিক মিলেনিয়াম পার্ক। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

শীত পড়ুক না পড়ুক, এটা বড়দিন!

Advertisement

হতে পারে তাপমাত্রার পারদে ডিসেম্বরের আমেজ এখনও গাঢ় হয়নি তত। রং-বেরঙের জ্যাকেট, সোয়েটারের কেতায় মরসুমি ফ্যাশনে ঝলমলিয়ে ওঠার বাসনাতেও তাই বাদ সাধছে রীতিমতো। তবু বড়দিন বলে কথা! রবিবার দিনভর তাই কলকাতাকে ঠেকানো গেল না এক ফোঁটাও। শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা, চেনা-অচেনা আমোদের ঠেকে কল্লোলিনীকে পাওয়া গেল সেই স্বমহিমায়।

চিড়িয়াখানায় খুদে শিম্পাঞ্জিদের সামনে জটলা বা নিকো পার্কে নতুন রাইডে ওঠার লাইনে অনেকেই সোয়েটারখানা কোমরবন্ধের মতো বেল্টের উপরে জড়িয়ে নিলেন। কারণ, নিখোঁজের তালিকায় জ্বলজ্বল করছে, উত্তুরে হাওয়া। কবে তার দেখা মিলবে, তারও ঠিক-ঠিকানা নেই।

Advertisement

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশ দাস জানালেন, বাংলাদেশ লাগোয়া সাগরের উপরে ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার জেরে সাগর থেকে জোলো হাওয়া ঢুকছে। ফলে ভ্যাপসা ভাব আরও বাড়ছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, এখনও স্বাভাবিকের থেকে বেশি (১৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। তাতে অবশ্য কলকাতা দমবার পাত্র নয়। সন্ধ্যায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানালেন, রেকর্ড ভিড় হয়েছে এই বড়দিনে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯২ হাজার লোক ভিড় করেন আলিপুরের বাগানে।

ইকোপার্কে জনসমুদ্র। ছবি: শৌভিক দে।

উৎসবের ঢাকে কাঠিটা অবশ্য পড়েছিল ক্রিসমাস ইভেই। তিরতিরে মোমের আলোয় গির্জার ভাবগম্ভীর সার্ভিসেই ভিড় উপচে পড়ে। শনিবার মধ্যরাতে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল গির্জায় ‘বেথলেহেমের শিশু’টির আবাহন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হলঘরের বাইরে তখনও থিকথিকে ভিড়ে ভরপুর সান্তা টুপি পরা জনতা। অত রাতে শুতে গেলেও এ দিন সকাল থেকে উৎসবের স্বাদ চেটেপুটে নিতে দেখা গেল, ক্লান্তি নেই আমজনতার।

উৎসব-পাগলদের কাছে আবেদনে দেখা গেল, এ বার সব থেকে এগিয়ে মস্তান, বুড়ি আর ছোটু— চিড়িয়াখানার তিন খুদে শিম্পাঞ্জি। তবে নিকো পার্কের নতুন রাইড ‘স্কাই ডাইভ’-এর আকর্ষণও জমজমাট। লোহার উড়ন্ত খাঁচায় মাটি থেকে প্রায় নাক বরাবর সাঁ করে ৮০ ফুট উঁচুতে ওঠার স্বাদ এই রাইডে। কোমরে বেল্ট বাঁধা অবস্থায় ঠিক যেন আকাশে ঝুলে থাকার মেজাজ। এক দিকে চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জাদুঘর, মিলেনিয়াম পার্ক বা প্রিন্সেপ ঘাট। অন্য দিকে, সল্টলেক-নিউ টাউনে নিকো পার্ক, ইকোট্যুরিজম পার্ক। সব মিলিয়ে উৎসবের রঙ্গমঞ্চ জমজমাট।

ছুটির দিনে পার্ক স্ট্রিটের নামী রেস্তোরাঁতেও টেবিল পাওয়া দুষ্কর। মাল্টিপ্লেক্স, সিঙ্গলস্ক্রিনে আমির খানের কুস্তির প্যাঁচ এবং ফেলুদা, ব্যোমকেশও বড়দিনের মেনু জমিয়ে দিয়েছে। আগের থেকে নিষ্প্রভ হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে শীতের সার্কাসও। সিঁথি, পাটুলি, টালাপার্কের মাঠে খেলা জমেছে। টালার মাঠে সার্কাস-কর্তা জয়নুল হক আশা রাখছেন, দেশি কসরতের সঙ্গে বেলারুশ, মেক্সিকো, ইথিওপিয়ার খেলুড়েদের আকর্ষণে আস্তে আস্তে ঠিক মাঠ ভরবে।

বিনোদনের নানা কিসিমের আউটডোর আকর্ষণের বাইরে ঘরোয়া পার্টির মেজাজও জমজমাট। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইভেন্ট খুলে ছোট ছোট দলে নানা বয়সের বন্ধুরা জড়ো হচ্ছেন নির্দিষ্ট ঠেকে। ভোজ-বিলাস, কেক কাটার আমেজে বাঙালির যিশু-পুজো দিকে দিকে নানা রূপে জমজমাট। কলকাতার বড়দিন আছে বড়দিনেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement