এ বার কি বদলাবে এমন জল-ছবি? ফাইল চিত্র
শহরের নিকাশি নালায় জমে থাকা পলি সাফাইয়ের কাজ এ বছর প্রায় হয়নি। লকডাউনের কারণে বিভিন্ন নিকাশি প্রকল্পের কাজের গতিও শ্লথ হয়েছে। ফলে প্রাক্ বর্ষার অল্প বৃষ্টিতেই জল জমেছে শহরের বেশ কিছু এলাকায়। আর তা-ই চিন্তা বাড়াচ্ছে পুরসভার। বর্ষার প্রবল বৃষ্টিতে শহর কলকাতা ফের জলমগ্ন হতে পারে বলে প্রমাদ গুনছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
যদিও পুরসভার দাবি, বর্ষায় জল জমলে তা দ্রুত নিষ্কাশনের সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া লকডাউনে বিভিন্ন নিকাশি প্রকল্পের কাজ এ বছর থমকে রয়েছে বলেও দায় সারতে চেয়েছে পুরসভা। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ বলেন, “বর্ষায় জল জমা রুখতে পুরসভা প্রতিবারের মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে পলি তোলা সংক্রান্ত প্রকল্প ছাড়াও কয়েকটি নিকাশি নালার কাজ সময়মতো শেষ করা যায়নি। তবে জরুরিকালীন ভিত্তিতে সেই কাজ চলছে।”
কেন ফি বছর বর্ষায় জল জমে শহরের একাধিক জায়গায়? পুরসভা সূত্রের খবর, ব্রিটিশ আমলে পুর এলাকায় যে ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা তৈরি করা হয়েছিল, তার মাধ্যমে ঘণ্টায় ৬ মিলিমিটার বৃষ্টির জল বেরোতে পারত। বর্তমানে পুর এলাকার আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিকাশি নালার সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে বর্তমানে ওই ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার মাধ্যমে ঘণ্টায় প্রায় ৩০ মিলিমিটার পর্যন্ত জল বেরোতে পারে। এ ছাড়াও পাম্পের মাধ্যমে আশপাশের বিভিন্ন খাল এবং নদীতে জল ফেলা হয়। কিন্তু তার পরেও জল জমার সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং ঘণ্টায় গড়ে ৭০-৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই বানভাসি হয়েছে শহর। এর প্রধান কারণ হল ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালায় জমে থাকা পলি এবং আশপাশের খালগুলির নাব্যতা হ্রাস।
নিকাশি নালায় পলি জমে থাকার কারণেই বৃষ্টির সময়ে গঙ্গায় জোয়ার থাকলে শহরের একাংশের জমা জল দ্রুত বেরোতে পারে না। আবার রাজ্য সেচ দফতরের সমীক্ষা অনুযায়ী, পাম্পের মাধ্যমে যে খালগুলিতে শহরের জমা জল ফেলা হয়, তার গভীরতা ৪ মিটার হওয়া উচিত। কিন্তু বিভিন্ন দফতরের প্রকল্পের জন্য ওই সব খালের উপরে একাধিক নির্মাণকাজের কারণে খালগুলির নাব্যতা ক্রমশ কমেছে। ফলে জমা জল সরতেও বেশি সময় লাগে।
পুরসভার নিকাশি দফতর সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন এলাকার নিকাশি নালা থেকে অন্যান্য বছরে যে পরিমাণ পলি তোলা হয়, এ বার তা সম্ভব হয়নি। তারকবাবুর কথায়, “পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, শহরের যে ১৮টি জায়গার নিকাশি নালায় পলি জমে রয়েছে, তা চিহ্নিত করেছি। সেখান থেকে পলিমাটি তোলার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে লোকজন না পাওয়ায় কাজে দেরি হয়েছে। অর্থ বরাদ্দেরও কিছু সমস্যা ছিল।” তবে তাঁর দাবি, ওই ১৮টি জায়গায় পলিমাটি সরানোর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করা হয়েছে। তপসিয়া এবং ঠনঠনিয়া এলাকার নিকাশি নালা সংস্কারের মতো বেশ কিছু নিকাশি প্রকল্পের কাজেও এ বছর ভাটা পড়েছে। তবে বেহালা অঞ্চলে ১২৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১২৬ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত কেইআইআইপি প্রকল্পের কাজ অনেকটা এগিয়েছে বলেও দাবি করেছেন তারকবাবু।
পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেন, “যে মণিখাল এবং বেগর খাল দিয়ে মূলত বেহালার জমা জল বার করা হয়, সেগুলি পরিদর্শন করেছি। ওই খাল দু’টিতে রেলের কিছু নির্মাণকাজ থাকায় জলের গতি কমতে পারে। ওগুলি সরানোর নির্দেশ দিয়েছি।”
তবে এর পরেও বর্ষায় শহরে জল জমার আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। সেই জল কত দ্রুত বার করা যাবে, আপাতত সেটাই চ্যালেঞ্জ কলকাতা পুরসভার সামনে।
আরও পড়ুন: গ্রামের দুর্দশা চৌবাগায়, তরজা নেতাদের