বিরোধীদের অভিযোগ, বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পুরকর্মীদের অভাব থেকে শুরু করে নাগরিকদের সচেতনতার অভাবের জেরেই কাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রতীকী ছবি।
পচনশীল এবং অপচনশীল আবর্জনা আলাদা করার জন্য কলকাতা পুরসভার তরফে বাড়ি বাড়ি সবুজ এবং নীল বালতি দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, যে উদ্দেশ্যে এই বালতি প্রদান করা হচ্ছে, তার কোনও সুরাহা হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নাগরিকেরা ওই বালতি গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহার করছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পুরকর্মীদের অভাব থেকে শুরু করে নাগরিকদের সচেতনতার অভাবের জেরেই কাজ ব্যাহত হচ্ছে। নাগরিকদের সচেতনতার অভাবের কথা স্বীকার করে মেয়র পারিষদ (কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ইতিমধ্যেই পুরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে কর্মশালা করা হয়েছে। এই ধরনের সচেতনমূলক কর্মশালা বার বার আয়োজন করতে হবে। রাতারাতি এই ব্যবস্থা একশো শতাংশ সফল হবে না। ধীরে ধীরে এই কাজে সফল হবে পুরসভা।’’
পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার জন্য শহরের বাড়ি বাড়ি সবুজ এবং নীল বালতি দেওয়ার কাজ গত ১ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে। এর জন্য ৩৮ লক্ষ বালতির বরাত দিয়েছিল পুরসভা। সূত্রের খবর, শহরের সমস্ত বাড়িতে নীল, সবুজ বালতি দেওয়ার কাজ শেষ হতে এখনও বেশ কিছু দিন সময় লাগবে। তবে যেখানে বালতি বিলি হয়ে গিয়েছে, সেখানেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিধি মেনে আবর্জনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়নি বলে অভিযোগ। কলকাতা পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে সমস্ত মানুষকে সচেতন করে পয়লা জানুয়ারি থেকে এই পরিষেবা চালু করতে চাই। জঞ্জাল পৃথকীকরণের জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করা ভীষণ প্রয়োজন।’’
উত্তর কলকাতার তৃণমূল কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘আমার ওয়ার্ডে বালতি এলেও পুরকর্মীর অভাবে বর্জ্য সংগ্রহের কাজটাই শুরু করা যাচ্ছে না।’’ উত্তর থেকে দক্ষিণ— শহরের বেশির ভাগ কাউন্সিলরের অভিযোগ, পুরকর্মীর অভাবের কারণেই মূলত বর্জ্য পৃথক করে সংগ্রহের কাজ থমকে রয়েছে। বাম কাউন্সিলর মধুছন্দা দেব বলেন, ‘‘শুধু নীল, সবুজ বালতি মানুষের হাতে তুলে দিলেই হবে না। বিষয়টি সাধারণ মানুষকে ভাল করে বোঝানোর জন্য অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে পুরসভাকেই। কারণ আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা বহু পরিবার ওই বালতি গৃহস্থালির কাজেই ব্যবহার করবে।’’
কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকেরও পর্যবেক্ষণ, ‘‘নতুন বালতি পেয়ে তাতে আবর্জনা ফেলতে চাইছেন না অনেকেই। বর্জ্য পৃথকীকরণের বিষয়টি নিয়ে নাগরিকদের সচেতন করার জন্য পুরসভাকে মূল ভূমিকা নিতে হবে।’’ বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পর্যাপ্ত কর্মীর ব্যবস্থা না করলে নতুন বালতি দেওয়া বৃথা।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, নাগরিকদের সচেতন করার পরেও যদি দেখা যায় তাঁরা আবর্জনা পৃথকীকরণ করছেন না অথবা পুরকর্মীরা গেলে তাঁদের পাত্রে নিয়ম মেনে জঞ্জাল ফেলছেন না, সে ক্ষেত্রে পুর আইন অনুযায়ী জরিমানার ব্যবস্থা করা হতে পারে।
এই প্রসঙ্গে পুরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বর্জ্য পৃথকীকরণেরজন্য নাগরিকদের সচেতন করার পরেও তাঁরা পুরকর্মীদের সহায়তা না করলে ভবিষ্যতেপুর আইন অনুযায়ী জরিমানার ব্যবস্থা করা হতে পারে।’’