Kolkata Port

করোনার কামড়ে ধুঁকছে বন্দর এলাকার বস্ত্র ব্যবসাও

মেটিয়াবুরুজ থেকে মহেশতলা পর্যন্ত যে বিস্তীর্ণ এলাকা রয়েছে, সেখানকার প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ এই বস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২০ ০৪:১০
Share:

কাজ বন্ধ বন্দর এলাকার বস্ত্র কারখানায়। নিজস্ব চিত্র

করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনের জেরে টানা পাঁচ মাস ধরে চরম সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছেন কলকাতা বন্দর এলাকার বস্ত্র ব্যবসায়ীরা!

Advertisement

ইদের মুখে একটানা লকডাউনের কারণে মেটিয়াবুরুজ, নাদিয়াল, রাজাবাগান ও মহেশতলার কয়েক লক্ষ বস্ত্রশিল্পীর কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা আশা করেছিলেন, দুর্গাপুজোর আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিকিকিনিও আবার আগের মতো হবে। কিন্তু গত এক মাস ধরে কলকাতায় করোনা সংক্রমণ যে রকম ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে, তাতে মাথায় হাত বন্দর এলাকার ওই ব্যবসায়ীদের।

মেটিয়াবুরুজ থেকে মহেশতলা পর্যন্ত যে বিস্তীর্ণ এলাকা রয়েছে, সেখানকার প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ এই বস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। এ ছাড়াও পরোক্ষ ভাবে আরও প্রায় দশ লক্ষ মানুষ জড়িয়ে আছেন এই ব্যবসায়। ছোট ছোট বস্ত্র কারখানাগুলির শ্রমিকেরা আসেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে। এ ছাড়া, সুচ, সুতো, কাপড়, বোতাম বা সেলাই মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণ ও সরবরাহকারীদেরও রুটি-রুজি নির্ভর করে এই বস্ত্র শিল্পের উপরেই।

Advertisement

বন্দর এলাকার বস্ত্র কারবারিদের অধিকাংশই ছোট ব্যবসায়ী। যাঁদের ছোট ছোট কারখানায় গা ঘেঁষাঘেঁষি করেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কর্মীরা সেলাইয়ের কাজ করেন। কিন্তু করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় ওই সমস্ত কারখানার বেশির ভাগ কর্মীই নিজেদের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন।

‘বাংলা রেডিমেড গারমেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক আলমগির ফকির বললেন, ‘‘সারা বছর ধরে ইদ আর দুর্গাপুজোর দিকে চেয়ে থাকি আমরা। কিন্তু এ বার মার্চ থেকে টানা লকডাউনের জেরে ইদের ব্যবসায় খুব ধাক্কা খেয়েছি। দুর্গাপুজোর আগেও পরিস্থিতি বদলাল না।’’ তিনি আরও জানান, অন্যান্য বছর পুজোর আগে এই সময়ে মেটিয়াবুরুজ, রাজাবাগান, নাদিয়াল, মহেশতলা এলাকায় তৈরি জামাকাপড়ের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এ বার সেখানে মেরেকেটে ১৫-২০ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে।

করোনার কারণে রাজাবাগানের ফকিরপাড়ার বাসিন্দা শেখ জুম্মান হোসেন তাঁর ছোট কারখানাটি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। জুম্মানের কথায়, ‘‘আমার ২০ জন কর্মচারী বাড়ি চলে গিয়েছেন। তাই কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি আমি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার পরিবারে ১১ জন সদস্য। কাপড় তৈরি করেই সংসার চলে। কিন্তু মাসের পর মাস এ ভাবে চলতে থাকলে কী করব? মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, বন্দর এলাকার বস্ত্র ব্যবসায়ীদের দিকে একটু নজর দিন।’’

কলকাতা পুরসভার ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা ‘হাওড়া হাট সংগ্রাম সমিতি’র সভাপতি মইনুল হক চৌধুরীর নাদিয়ালে একাধিক বড় বড় কারখানা রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার ভয়ে আমার তিনটি বড় কারখানা থেকে দর্জিরা প্রত্যেকে বাড়ি চলে গিয়েছেন। স্থানীয় জনা কয়েক যুবক অল্প কিছু সেলাইয়ের কাজ করছেন।’’

বন্দর এলাকার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সেখানে তৈরি জামাকাপড় সারা ভারতে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বাইরে থেকে ক্রেতাদের অধিকাংশই আসতে পারছেন না। ক্রেতাদের কেউ কেউ ফোনে বরাত দিলেও প্রাপ্য টাকার বেশির ভাগটাই আপাতত বাকি রেখেছেন।

মেটিয়াবুরুজের বিধায়ক আব্দুল খালেক মোল্লা বলেন, ‘‘ইদের পরে দুর্গাপুজোতেও বন্দর এলাকার ওস্তাগরদের ব্যবসা মার খেল। ওঁদের পাশে দাঁড়াতে রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখে অনুরোধ করব।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement