Renovation Work

বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার ছ’মাস পরেও সংস্কার আটকে, ক্ষুব্ধ ভাড়াটেরা

গত বছর ১৬ অগস্ট রাতে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ওই পাঁচতলা বহুতলের চারতলার অংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ইলা আগারওয়াল (৪৫) নামে এক মহিলার।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৮
Share:

পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে এই বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ ভেঙেই মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। তার পরেও সংস্কারের কাজ বিশ বাঁও জলে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

মাস ছয়েক আগে উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে একটি বিপজ্জনক বহুতলের একাংশ ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল এক দম্পতির। সেই ঘটনার পরে ওই বাড়িতে বসবাসকারী অন্য ভাড়াটেরা কলকাতার পুরসভার থেকে ‘সার্টিফিকেট অব অকুপেন্সি’ (নতুন বাড়ি তৈরির পরে প্রস্তাবিত নকশায় ভাড়াটেদের থাকার শংসাপত্র) পেয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও শুরুই হয়নি বাড়ি সংস্কারের কাজ! কারণ, বাড়িটির মালিক এখনও বেপাত্তা। ফলে অস্থায়ী ঠিকানায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ভাড়াটেরা। তাঁদের কেউ আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ বা বিপজ্জনক বাড়িটির কাছেই ছাউনি তৈরি করে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়েছেন।

Advertisement

গত বছর ১৬ অগস্ট রাতে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ওই পাঁচতলা বহুতলের চারতলার অংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ইলা আগারওয়াল (৪৫) নামে এক মহিলার। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ইলার স্বামী অজয় আগারওয়ালকে (৫২)। কয়েক দিন পরে তিনিও মারা যান। ঘটনার পরেই ওই বিপজ্জনক বাড়িটি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন প্রায় ১০০ জন ভাড়াটে। ১৮ অগস্ট তাঁদের হাতে ‘সার্টিফিকেট অব অকুপেন্সি’ তুলে দেন খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি সেই সময়ে বলেছিলেন, ‘‘বাড়িটা নতুন করে তৈরি হলে মালিক যেমন অতিরিক্ত নির্মাণের অনুমতি পাবেন, তেমনই সুবিধা পাবেন ভাড়াটেরাও।’’ কিন্তু সেই ভাড়াটেদের ক্ষোভ, ঘটনার পরে ছ’মাস কেটে গেলেও শুরুই হল না বাড়ি সংস্কারের কাজ।

ওই দুর্ঘটনায় মা-বাবা ইলা ও অজয়কে হারিয়ে বর্তমানে বাগুইআটিতে মামার বাড়িতে রয়েছেন তাঁদের দুই ছেলে আদর্শ আগারওয়াল ও তাঁর নাবালক ভাই রাঘব। বছর ২২-এর আদর্শ এখন তপসিয়ায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। ১৬ অগস্ট রাতে মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই জন্য রক্ষা পান। আদর্শের আক্ষেপ, ‘‘মেয়র শংসাপত্র তুলে দিলেও বাড়ির মালিকেরই খোঁজ নেই। আর তিনি না এগিয়ে এলে বাড়ি সংস্কার হওয়া অসম্ভব। মেয়রের কাছে আমাদের আবেদন, বাড়িটি সারাইয়ে যাতে দ্রুত হাত দেওয়া যায়, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ করুক পুরসভা।’’

Advertisement

পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে ওই ভেঙে পড়া বহুতলটির নম্বর ৬৫বি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একই ঠিকানায় থাকা সামনের পাঁচতলা বহুতলটি অক্ষত আছে। ভিতরের দিকের বহুতলটি ভেঙে পড়ে গত বছরের ১৬ অগস্ট। বর্তমানে দু’টি বহুতলের মাঝখানে ফাঁকা অংশে ছাউনি খাটিয়ে কোনও রকমে বসবাস করছেন জনা দশেক ভাড়াটে। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘পুরসভা থেকে এই ছাউনি করে দেওয়া হলেও বৃষ্টি হলে বা তীব্র রোদে এখানে থাকা মুশকিল। সেই কারণে অধিকাংশ ভাড়াটে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।’’

পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকেরা মেনে নিয়েছেন, শহরের বহু বিপজ্জনক বাড়ির মালিক এগিয়ে না আসায় ওই সব বাড়ি ভেঙে সংস্কার করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে আবার বাড়ির মালিক পুরসভার বিরুদ্ধে আদালতে যাচ্ছেন। পাথুরিয়াঘাটার ওই এলাকার পুরপ্রতিনিধি ইলোরা সাহা বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে, পুরসভা ভাড়াটেদের হাতে ‘সার্টিফিকেট অব অকুপেন্সি’ তুলে দিলেও বাড়ির মালিকের খোঁজ না মেলায় বাড়ি সংস্কার করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে মেয়রের সঙ্গে কথা বলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement