ওম: প্রবল ঠাণ্ডায় গঙ্গার ধারে আগুনের চারপাশে ভিড় কচিকাঁচাদের। শনিবার, হাওড়ার শিবপুর ঘাটে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
স্লগ ওভার বলে কথা। ইনিংস শেষের আগে যতটা রান তোলা যায়। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে তাই দাম কমিয়ে শাল বিক্রির চেষ্টা বিক্রেতার। ময়দানে ওষুধ ব্যবসায়ীর সপরিবার বেড়াতে আসা। ভেলপুরি বিক্রেতারও সুযোগ বুঝে ব্যবসায় লক্ষ্মীলাভের চেষ্টা। সংক্রান্তির আগে শেষ স্পেলে শীত খেলতে আসায় অনেকেরই মুখের হাসি চওড়া হয়েছে।
শীতের মরসুম বলে চিহ্নিত থাকলেও জানুয়ারির শুরুতেই কলকাতায় ঠান্ডা কার্যত গায়েব হয়ে গিয়েছিল। দিনের বেলায় গায়ে গরম পোশাক রাখাই দায় হয়ে উঠেছিল। এমনকি, রোদের তাপও সহ্য হচ্ছিল না। আচমকাই গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় ফের শহরের বুকে হিমেল বাতাস বইতে শুরু করেছে। রাতে-সকালে ঠান্ডা হাওয়া গায়ে-মাথায় কামড়ও ধরাচ্ছে। তার জেরে সপ্তাহান্তে শনিবার ফের শীতের ছবি ফিরে এল কলকাতায়। আজ, রবিবার সেই ছবি আরও স্পষ্ট হবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
কেমন ছবি? এ দিন সাতসকালে কলকাতা শহরের অনেক জায়গাতেই পথবাসীদের দেখা গিয়েছে আগুন পোহাতে। গায়ে সোয়েটার, কান-ঢাকা টুপি পরে সকালে বাজার করতে দেখা গিয়েছে লোকজনকে। শনিবারের দুপুরে উইকেট, ব্যাট নিয়ে ময়দানের পথে হাঁটতে দেখা গিয়েছে কচিকাঁচাদেরও।
পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী, রিপন স্ট্রিটের বাসিন্দা সাকিব আহমেদ ময়দানে স্কুটারের উপরে বসে রোদে পিঠ সেঁকছিলেন। অদূরে ছোটাছুটি করে মাঠে খেলছিল তাঁর তিন সন্তান। সাকিবের কথায়, ‘‘আমরা মাঝেমধ্যেই ময়দানে আসি। তবে ঠান্ডার সময়ে পরিবেশটা খুব ভাল লাগে। আজ যেমন বেশ ঠান্ডা। উপভোগ করছি। বাচ্চাদের স্কুল চালু হয়ে গিয়েছে। গরমও পড়ে যাবে। যে ক’টা দিন ঠান্ডাটা উপভোগ করা যায়, ভাল।’’
সাতসকালে মানিকতলা বাজারে এসে কাজরী মাছ খুঁজছিলেন গড়পারের বাসিন্দা রঞ্জিত সরকার। ব্যবসায়ী রঞ্জিত জানান, কিছু কিছু মাছ রয়েছে, যা শীতকালে মেলে। তাঁর কথায়, ‘‘আবার ঠান্ডাটা ফিরে এসে বেশ জমে গিয়েছে। রবিবার বাড়িতে অতিথি আসবে। দু’-তিন রকম মাছ কিনে রাখছি। সংক্রান্তির পরে তো আস্তে আস্তে ফের ঠান্ডা কমতে শুরু করবে। আর যে ক’টা দিন ঠান্ডাটা উপভোগ করা যায়।’’
দুপুরে মধ্য কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে গরম জামাকাপড়ের কয়েকটি দোকানে দেখা গেল, অল্পবিস্তর ক্রেতাদের জটলা। দাম কমিয়ে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করছিলেন উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী সন্দীপ দাস। দরাদরির পরে ৬০০ টাকা দামের তিনটি শাল ৪৫০ করে বিক্রি করে দিলেন সন্দীপ। তাঁর কথায়, ‘‘ঠান্ডা পড়ায় লোকজন একটু-আধটু আসছে। আমি শিলিগুড়ির বাসিন্দা। শেষ বেলায় যা মালপত্র আছে, মোটামুটি বিক্রি করে বাড়ি ফিরে যাব।’’
গরমের মাঝে আচমকা ঠান্ডা পড়ায় বেশ চনমনে ভিক্টোরিয়া তল্লাটে ঘোড়ার পিঠে বসা মহম্মদ আলি। ছোটরা আসছে। ঘোড়ায় চড়ছে। ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেল ভেলপুরি বিক্রেতা আরিয়ান সিংহকে। তাঁর কথায়, ‘‘কমে যাওয়া ব্যবসা গত কাল থেকে একটু বেড়েছে। রবিবার সকালে কমবয়সিরা ক্রিকেট খেলতে আসবে। তখন বিক্রি আরও বাড়বে বলেই মনে হয়। তবে স্কুল খুলে যাওয়ার কারণে বড়দিন কিংবা বর্ষবরণের শীতের ভিড়টা এখন আর হবে না। আশা করছি, ফেব্রুয়ারি অবধি ব্যবসা চলবে।’’
ঘটনা যা-ই হোক, বিদায়ের আগে শেষ বেলার শীত কলকাতাবাসীকে যে চনমনে করে দিয়েছে, তা নির্দ্বিধায় বলা চলে। গরম কাপড়ের বিক্রেতার মুখে হাসি ফুটেছে, ভিক্টোরিয়া, চিড়িয়াখানার পথেও হাঁটতে দেখা গিয়েছে লোকজনকে। অনেকেরই আশা, আজ, রবিবার শীতের কলকাতার চেনা ছবিটা আরও বেশি দেখা যাবে।