তাপমাত্রার পতনের জেরে দক্ষিণবঙ্গের শ্রীনিকেতন ছুঁয়ে ফেলেছে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িকে ফাইল চিত্র।
রাত বাড়লেই তরতরিয়ে নামছে পারদ। মিলছে হিমেল হাওয়া। এই পরিস্থিতিতে অক্টোবর এবং নভেম্বরের সন্ধিক্ষণে খেল দেখাল উত্তুরে হাওয়া! হাওয়া অফিসের খবর, রবিবার অক্টোবরের শেষ সন্ধ্যা থেকে কলকাতায় যে পারদ পতন শুরু হয়েছিল, সোমবার ভোরে তা এসে থিতু হয়েছে ২০.৬ ডিগ্রিতে।
শুধু মহানগর নয়, পারদ পতন অব্যাহত শহরতলি এবং দক্ষিণের জেলাগুলিতেও। তাপমাত্রার পতনের জেরে দক্ষিণবঙ্গের শ্রীনিকেতন ছুঁয়ে ফেলেছে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িকে। উত্তরবঙ্গে তরাইয়ের জেলাগুলিতে ঋতুচক্রে হেমন্ত তবু লক্ষ করা যায়। কিন্তু গত কয়েক বছর কলকাতা এবং লাগোয়া দক্ষিণবঙ্গে কার্যত নিখোঁজ ছিল হেমন্ত। এ বার আবহাওয়ার মতিগতি বলছে, ঋতুচক্রে ফিরে এসেছে সে।
হেমন্তের প্রত্যাবর্তনে প্রায় সর্বত্র শিরশিরে ঠান্ডা মালুম হচ্ছে। মহানগরেও ভোরের দিকে ফ্যান বন্ধ করতে হচ্ছে বা গায়ে চাপাতে হচ্ছে হাল্কা চাদর। দিনের বেলা রোদ উঠলেও গরমের কষ্ট হচ্ছে না।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সোমবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে ২ ডিগ্রি কম। দমদমে অবশ্য তাপমাত্রা তুলনায় একটু বেশি ছিল। এ দিন ভোরে সেখানে ২১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ব্যারাকপুরেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০.৬ ডিগ্রি ছিল। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে রাতের তাপমাত্রা নেমেছে ২০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে সব চেয়ে কম তাপমাত্রা ছিল বীরভূমে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শ্রীনিকেতনে এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭.৪ ডিগ্রি। শিলিগুড়িতেও ভোরের পারদ থিতু হয়েছে ১৭.৪ ডিগ্রিতে।
দু’-আড়াই দশক আগে পর্যন্তও কলকাতা কিংবা শহরতলিতে কালীপুজোর রাতে হিম পড়তে দেখা যেত। শেষ রাত কিংবা ভোরে মাঠঘাট আবছা হত হেমন্তের কুয়াশায়। এ বার উত্তুরে হাওয়া সেই স্মৃতি জাগিয়ে তুলেছে। হাওয়া অফিসেরও আশ্বাস, চলতি সপ্তাহে আবহাওয়ার তেমন পট পরিবর্তন হবে না। তাই কার্তিকের ভোরে চোখে, মুখে, চুলের উপরে শিশির ঝরতেই পারে।
তবে এই পারদ পতনকে শীতের আগমন বলছেন না আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে, উত্তুরে হাওয়া ঢুকছে। কিন্তু শীত জাঁকিয়ে বসতে দেরি আছে। যদিও আবহবিদদের একাংশের অনুমান, প্রশান্ত মহাসাগরের জলের উষ্ণতা কম থাকায় (লা নিনা) এ বার শীত একটু তাড়াতাড়ি থিতু হতে পারে। উত্তর ভারতের একাংশে জাঁকিয়ে ঠান্ডাও পড়তে পারে। কিন্তু তা হলেও বঙ্গে এখনই শীত আসছে না বলেই মনে করছেন তাঁরা।
এই ঋতু পরিবর্তনের সময়ে সাবধানবাণীও শোনাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, এ সময়ে চট করে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে কিংবা নানা ধরনের ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে। তাই হেমন্তের আঘ্রাণ নিতে হলেও সতর্কতা মেনে চলতে হবে। শুধু কোভিড নয়, বায়ুবাহিত অন্য রোগ থেকেও বাঁচতে মাস্ক জরুরি। এড়িয়ে চলতে হবে ঠান্ডা পানীয় বা আইসক্রিম।