শিশু কল্যাণ সমিতির অফিস থেকে পালিয়ে গেল এক কিশোর!
গত মঙ্গলবার এমনই ঘটনা ঘটেছে পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলে কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতির দফতরে। সমিতির তরফে এমনই অভিযোগ জমা পড়েছে পার্ক স্ট্রিট থানায়।
পুলিশ জানায়, পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদার দুই কিশোরকে উদ্ধার করে দিল্লির পুলিশ। উদ্ধারের পরে দু’জনকে দিল্লির শিশু কল্যাণ সমিতির সামনে হাজির করা হলে তাদের কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতিতে পাঠানো হয়। সেই মতো দিল্লির দুই পুলিশকর্মী ওই কিশোরদের নিয়ে গত মঙ্গলবার, ১০ জুলাই ৮৯ ইলিয়ট রোডে কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতিতে হাজির করে। কিন্তু ট্রেন ধরার সময় হয়ে যাওয়ায় ওই দুই পুলিশকর্মী তাড়াতাড়ি তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেন।
সমিতি সূত্রের খবর, এ সবের মাঝেই হঠাৎ শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে পালানোর চেষ্টা করে ওই দুই কিশোর। এক জন বড় রাস্তায় নামার আগেই পুলিশকর্মীরা ধরে ফেললেও, বছর ষোলোর কিশোরটি জোরে দৌড় দেয়। তাকে আর ধরা যায়নি। এর আগে চাইল্ড লাইনের হাত থেকে রাস্তায় পালানোর ঘটনা ঘটলেও, সমিতির অফিস থেকে সদস্যদের উপস্থিতিতে এমন ঘটনার নজির নেই বলেই দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।
কিন্তু এ রকম ঘটনা ঘটল কেন?
সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে অনেক আগে। নতুন সমিতি গঠনের কাজ শুরু হলেও তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ফলে গত কয়েক মাস ধরে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদিয়া, হুগলি শিশু কল্যাণ সমিতির কাজ সামলাচ্ছে মুর্শিদাবাদের শিশু কল্যাণ সমিতি। ফলে সোমবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে সাতটি জেলার দিন আলাদা আলাদা করে ভাগ করা রয়েছে। যেমন, কলকাতা থানা এলাকার শিশুদের হাজির করানোর দিন ধার্য করা রয়েছে সোমবার এবং মঙ্গলবার। সে ক্ষেত্রে কলকাতার সমিতির দু’দিনের মধ্যে এক এক দিন প্রায় শ’খানেক করে কেস সামলাতে হয় বলে দাবি ভারপ্রাপ্ত সমিতির। নিয়মানুযায়ী ওই কেসে যুক্ত শিশুদের ওই দিন সমিতির সামনে হাজির করাতে হয়। অথচ কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতির অফিসে শিশুদের বসার ঘর মাত্র একটি। অন্য একটিতে সমিতির চেয়ারপার্সন-সদস্যেরা বসেন এবং কেস ধরে শিশুদের সেই ঘরে ডাকা হয়। এ ছাড়া রয়েছে একটি বারান্দা। সেখানে শিশুদের বসার কোনও ব্যবস্থা নেই। তবে ভিড়ের চাপে সেখানেও অনেকে অপেক্ষা করে। ফলে একটি ঘর আর বারান্দা মিলিয়ে শ’খানেক শিশু, চাইল্ড লাইনের লোকজন, বাড়ির লোকজনের এমন ভিড় থাকে যে, সেখান থেকে কেউ পালিয়ে এক বার ভিড়ে মিশে গেলে আর ধরা সহজ নয়। বর্তমান সমিতির চেয়ারপার্সন শবনম রামস্বামী গত মঙ্গলবারের কিশোর পালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর দাবি, পলাতক কিশোর দিল্লি ফিরে গিয়েছে। যে হোমে সে ছিল, সেখানেই ফের আশ্রয় নিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার তাঁদের কাছে খবর এসেছে।
কিন্তু এ রকম পরিস্থিতিতে কোনও শিশু পালালে তার দায়িত্ব কার?
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সমিতির কোনও সদুত্তর মেলেনি। কবে নতুন সমিতি ঘোষণা হবে, তা নিয়েও মেলেনি নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের কোনও উত্তর।