ভাঙা পথে বেপরোয়া বাস, সল্টলেকে বলি স্কুলশিক্ষিকা

সল্টলেকে একের পর এক দুর্ঘটনার পরে প্রশাসন নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু রাস্তা মেরামতি, ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন, গাড়িচালকদের কর্মশালাই সার। বিরাম নেই দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর। বুধবার সকালেই ফের সল্টলেকে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল বছর পঞ্চাশের এক স্কুলশিক্ষিকার। মৃতার নাম শিখা রায়। তিনি কলকাতার ডন বস্কো স্কুলে কর্মরত ছিলেন। একই রুটের দু’টি বাসের রেষারেষিতে পড়ে মৃত্যু হয় শিখাদেবীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৬
Share:

সল্টলেকে হায়াত হোটেলের সামনে এখন এমনই দুরবস্থা রাস্তার।

সল্টলেকে একের পর এক দুর্ঘটনার পরে প্রশাসন নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু রাস্তা মেরামতি, ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন, গাড়িচালকদের কর্মশালাই সার। বিরাম নেই দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর। বুধবার সকালেই ফের সল্টলেকে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল বছর পঞ্চাশের এক স্কুলশিক্ষিকার। মৃতার নাম শিখা রায়। তিনি কলকাতার ডন বস্কো স্কুলে কর্মরত ছিলেন।

Advertisement

একই রুটের দু’টি বাসের রেষারেষিতে পড়ে মৃত্যু হয় শিখাদেবীর। যে বাসটির ধাক্কায় তাঁর মৃত্যু হয়, সেটি নিয়ম ভেঙে উল্টো দিকের লেন ধরে আসছিল।

বাইপাস থেকে পূর্বাচলের সামনে দিয়ে সল্টলেকে ঢোকার ওই রাস্তাটি বেশ কিছুদিন ধরেই বিপজ্জনক ভাবে ভাঙা। বিরাট বড় একাধিক গর্তে ভরে গিয়েছে গোটা রাস্তাটিই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, যে কোনও সময়েই বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বুধবার সকালে রেষারেষি করে যাওয়ার সময়ে ওই গর্ত এড়াতেই একটি বাস উল্টোদিকের রাস্তায় ঢুকে পড়ে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন।

Advertisement

বাসিন্দাদের অভিযোগ, সল্টলেকে ট্রাফিক ব্যবস্থা, রাস্তা, পার্কিং-এর সংস্কার না হলে সমস্যা মিটবে না। প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিলেও তার কোনও প্রতিফলন নেই। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার। অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরও যথাযথ পদক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকাল আটটা নাগাদ সল্টলেক স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেট এবং পাশের একটি হোটেলের মাঝে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাইপাস থেকে সল্টলেকে ঢুকছিল একই বেসরকারি রুটের দু’টি বাস। ওভারটেক করতে গিয়ে একটি বাস নিয়ম ভেঙে উল্টো দিকের লেন ধরে তীব্র গতিতে যাচ্ছিল। তখনই পূর্বাচল আবাসনের বাসিন্দা শিখাদেবী স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ির সামনে রাস্তা পেরোচ্ছিলেন। যে লেনটি সল্টলেক থেকে কলকাতার দিকে যাচ্ছে, সেখানে উল্টো দিক থেকে একটি বাস এসে শিখাদেবীকে ধাক্কা মেরে বেশ কিছুটা হিঁচড়ে নিয়ে যায়। স্থানীয় লোকেরাই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে বেহালা থেকে বাস-সহ চালককে আটক করে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে খবর, শিখাদেবী ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে পূর্বাচল আবাসনে থাকতেন। তাঁর ছেলে কানাডায় থাকেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের মিনু চক্রবর্তী।

সোমবার দুপুরেও করুণাময়ীর কাছে এক পথ-দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন এক মহিলা। কিছু দিন আগেই পাঁচ নম্বর সেক্টরে রাস্তায় রাখা বালিতে পিছলে পড়ে যান এক মোটরবাইক চালক। পিছন থেকে আসা একটি গাড়ির ধাক্কায় তাঁর মৃত্যু হয়। তারও কিছু দিন আগে সল্টলেকের জি ডি আইল্যান্ডের কাছে স্কুলবাসে পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক স্কুলছাত্রের।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ন্যূনতম গর্ত বোজানোর কাজও হচ্ছে না। রাস্তা তো বাড়ছেই না, উপরন্তু অনেক বাসিন্দা রাস্তাতেই তাঁদের গাড়ি রাখেন। সল্টলেকের বেশ কয়েকটি মোড়ে সিভিক পুলিশ বা ট্রাফিক সিগন্যাল থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এই সুযোগে গাড়িচালকেরাও ট্রাফিক আইন ভেঙে চলেছেন। পিএনবি মোড় থেকে করুণাময়ী পর্যন্ত রাস্তা জুড়ে গাড়ি দাঁড় করানো থাকে। ফলে কমে গিয়েছে রাস্তা। স্টেডিয়ামের কাছে সল্টলেকে ঢোকার মুখের পথ বেহাল। করুণাময়ী মোড় কার্যত রিক্শা, অটো, শাটল্ গাড়ি, দোকানের দখলে।

বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের কর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “যে হারে গাড়ি বাড়ছে, সেই তুলনায় রাস্তার পরিকাঠামো বা ট্রাফিক ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। পাশাপাশি, গাড়িচালকদের দৌরাত্ম্যও চলছে। প্রশাসন সার্বিক পরিকল্পনা না নিলে লাভ হবে না।”

পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও বলছেন, “সল্টলেকে রাস্তা ও ট্রাফিক নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই কয়েকটি পাকোর্ম্যাটের পরিকল্পনা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনকেও বলেছি, পার্কিং-সহ ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা করতে। দ্রুত এই কাজ করতে হবে। তবে, সল্টলেকের একাধিক রাস্তায় ইতিমধ্যেই ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট বসানো হয়েছে। বর্ষার পরে সেই রাস্তাগুলির কাজে হাত দেওয়া হবে।”

বাসিন্দাদের অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়ে সল্টলেকের এডিসিপি দেবাশিস ধর বলেন, “সমস্যা মেটাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। ট্রাফিক আইন আরও কড়া ভাবে লাগু করার পাশাপাশি পার্কিং, রাস্তা ইত্যাদি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement