ধর্মঘট ‘সফল’, বড় আন্দোলনের হুমকি দিলেন ট্যাক্সিচালকেরা

প্রশাসনের আশ্বাস ছিল। ধর্মঘট ব্যর্থ করতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল শাসক দলের পক্ষ থেকেও। তা সত্ত্বেও বুধবার দিনভর ট্যাক্সিহীন হয়েই রইল কলকাতা। চূড়ান্ত ভোগান্তির মুখে পড়লেন নিত্যযাত্রীরা। এতেই যে অবশ্য ট্যাক্সি-জট মিটল, এমনটা বলা যাচ্ছে না। ট্যাক্সিচালকদের দাবি মেনে নেওয়া দূর অস্ৎ, কোনও রকম আলোচনায় বসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ট্যাক্সিচালকদের দাবির সামনে নমনীয় হওয়ার প্রশ্নই উঠছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৩
Share:

দেখা নেই ট্যাক্সির। বুধবার, হাওড়া স্টেশনে। —নিজস্ব চিত্র।

প্রশাসনের আশ্বাস ছিল। ধর্মঘট ব্যর্থ করতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল শাসক দলের পক্ষ থেকেও। তা সত্ত্বেও বুধবার দিনভর ট্যাক্সিহীন হয়েই রইল কলকাতা। চূড়ান্ত ভোগান্তির মুখে পড়লেন নিত্যযাত্রীরা।

Advertisement

এতেই যে অবশ্য ট্যাক্সি-জট মিটল, এমনটা বলা যাচ্ছে না। ট্যাক্সিচালকদের দাবি মেনে নেওয়া দূর অস্ৎ, কোনও রকম আলোচনায় বসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ট্যাক্সিচালকদের দাবির সামনে নমনীয় হওয়ার প্রশ্নই উঠছে না। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “যাত্রী প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে সরকার কড়া অবস্থান নেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ধৃত ২২ জন চালকের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।

অন্য দিকে, ধর্মঘট সফল হওয়ায় ট্যাক্সিচালকেরাও পাল্টা জানিয়েছেন, অবিলম্বে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন তাঁরা। সেই লক্ষ্যে বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতৃত্বে আজ, বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছেন ট্যাক্সিচালকেরা। সেখানেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে শ্রমিক সংগঠনগুলি সূত্রের খবর, পরিবহণ-সহ নানা ক্ষেত্রের শ্রমিকদের একজোট করে সরকারের বিরুদ্ধে বড় আন্দোলনে নামার কথা ভাবছে বিরোধী দলগুলি।

Advertisement

গত ৭ অগস্ট থেকে পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন ট্যাক্সিচালকেরা। ওই আন্দোলনে যোগ দিতে এসে ভাঙচুর চালিয়েছেন, এই অভিযোগে ২২ জন ট্যাক্সিচালককে গ্রেফতার করে সরকার। তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেওয়ার দাবিতে কয়েক দফায় সরকারের বিরুদ্ধে সমাবেশ, আইন অমান্য এবং মিছিল করেন ট্যাক্সিচালকেরা। কর্মসূচিতে যোগ দিতে ওই সব দিনে ট্যাক্সি বার করেননি তাঁরা। ফলে অঘোষিত ট্যাক্সি ধর্মঘট হয়েছে শহর জুড়ে। এ দিন প্রথম ঘোষিত ধর্মঘট ডাকেন ট্যাক্সিচালকেরা। সকাল থেকে রাস্তায় কার্যত ট্যাক্সির দেখাই মেলেনি। এমনকী, শাসক দলের ট্যাক্সিচালকেরাও গাড়ি বার করেননি। স্বভাবতই তাতে রীতিমতো উৎসাহী সিটু, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি-সহ বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতারা।

সিটু নেতা অনাদি সাহু এ দিন বলেন, “সরকার আন্দোলন ভাঙতে মিথ্যা মামলা করেছিল। তাতে আন্দোলন তীব্র হওয়ায় মুশকিলে পড়ে গিয়েছে। সরকার মিথ্যা মামলা না-তোলা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা আইনি লড়াইয়েও প্রস্তুত। সরকার আদালতে প্রমাণ করুক, ওই ২২ জন চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক।” শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, দাবি পূরণ না হলে এ দিন শুধু ধর্মঘট নয়, বিকেলে এসপ্ল্যানেড থেকে মিছিল করবেন ট্যাক্সিচালকেরা। ওই মিছিলের শেষেই ট্যাক্সিচালকেরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার ডাক দেন।

তবে দিনভর ট্যাক্সি ধর্মঘট তো ছিলই, সঙ্গে বিকেলে মিছিল আর দুপুরে শহরের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক সংগঠনগুলির বিক্ষোভের জেরে ভোগান্তি বাড়ে নিত্যযাত্রীদের। পুলিশ জানিয়েছে, দুপুরে বিজন সেতু, মহাজাতি সদন, রবীন্দ্র সরণি, শোভাবাজার মোড়, বেলেঘাটা-সিআইটি মোড়, বেহালা চৌরাস্তা-সহ কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ দেখায় ট্যাক্সিচালক-সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি। তার জেরে যানজট হয় ওই সব রাস্তায়। পুলিশ জানিয়েছে, মিছিলের জেরে গণেশ অ্যাভিনিউ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, সূর্য সেন স্ট্রিট, যদুনাথ দে স্ট্রিট, বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট, বিধান সরণি-সহ মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা যানজটে আটকে যায়। হয়রানির মুখে পড়েন অফিসফেরত যাত্রীরা।

এর আগে অঘোষিত ধর্মঘটের কারণে সকালের দিকে তা-ও শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশন, বিমানবন্দর-সহ শহরের ব্যস্ত এলাকায় কিছু ট্যাক্সি ছিল। বেলা বাড়তেই ক্রমশ কমেছিল ট্যাক্সির সংখ্যা। কিন্তু এ দিন সকাল থেকেই বিমানবন্দর, রেল স্টেশন-সহ কোথাওই ট্যাক্সির দেখা মেলেনি। বিমানবন্দরে এ দিন সকাল থেকেই প্রি-পেড বুথ ছিল একেবারে সুনসান। ফলে, অন্য প্রাইভেট ট্যাক্সির উপরে চাপ বেড়ে যায়। ভলভো বাস বাড়িয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনের দিনভরের ছবিটাও ছিল একই রকম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement