—ফাইল চিত্র।
প্রায় ২০ বছর পরে সত্যিটা মেনে নিল পশ্চিমবঙ্গের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের গবেষকেরা নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তের লেক গার্ডেন্স, প্রিন্স আনোয়ার শাহ, টালিগঞ্জের একাংশ, যাদবপুর, গড়িয়া এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের পরিমাণ বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছচ্ছে। তাই ওই এলাকায় গভীর নলকূপ ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারির সুপারিশ করেছিলেন ওই গবেষকেরা।
কলকাতা পুরসভা বা রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সেই সুপারিশকে আমল দেয়নি। ওই এলাকায় একের পর এক গড়ে উঠেছে বহুতল আবাসন। কী বাম, কী তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা— কেউই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় দক্ষিণ কলকাতার ওই এলাকায় সর্বত্রই পানীয় জলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে গভীর নলকূপ।
২০ বছর আগের ওই ভবিষ্যদ্বাণীতে যে এতটুকুও খাদ ছিল না, বুধবার আর্সেনিক-ফ্লুওরাইড নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রে সেটাই পরিষ্কার হল। রাজ্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথ জানিয়ে দিলেন, লেক গার্ডেন্স, টালিগঞ্জের একাংশ, সন্তোষপুর, গড়িয়ার ভূগর্ভস্থ জলে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক আছে। বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক রয়েছে সিঁথির দু’-একটি জায়গাতেও। কুমারজ্যোতিবাবুর কথায়, ‘‘কলকাতার ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক দূষণের একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই নলকূপের জল, বিশেষ করে বহুতল বাড়ির নলকূপের জল পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হয়ে তবেই পান করা উচিত।’’
রাজ্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যানের মন্তব্য, ‘‘অতীতে একটি গভীর নলকূপে ও ২০-২৫টা হ্যান্ড পাম্প বা নলকূপের জলে আর্সেনিক মিলেছিল। এখন আর্সেনিকের সহনমাত্রা কমিয়ে দেওয়ায় (প্রতি লিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রামের জায়গায় ১০মাইক্রোগ্রাম) আর্সেনিকপ্রবণ নলকূপের সংখ্যা স্বভাবতই বাড়বে।’’
কলকাতা পুরসভা সূত্রেও লেক গার্ডেন্স এবং টালিগঞ্জের কিছু অংশে ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক থাকার কথা এ দিন স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তবে পুরসভার এক উচ্চপদস্থ কর্তার দাবি, যাদবপুর এলাকার সন্তোষপুরের ভূগর্ভস্থ জলে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক নেই। গড়িয়া লাগোয়া যে তল্লাটের ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক মিলেছে, তা কলকাতা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত নয়, রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার মধ্যে। সিঁথি লাগোয়া আর্সেনিক কবলিত তল্লাট বরাহনগর পুরসভার মধ্যে পড়ছে।
পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের ওই কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘আদিগঙ্গা বা টালি নালার গা-ঘেঁষা, টালিগঞ্জের করুণাময়ী সেতু লাগোয়া কয়েকটি পকেট আর্সেনিক প্রবণ।’’ তবে তাঁর বক্তব্য, যে সব নলকূপের জলে আর্সেনিক মিলেছিল, সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে এখন চালু ভূগর্ভস্থ নলকূপের সংখ্যা প্রায় ৩০০ আর নলকূপের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। সেগুলির জলে আর্সেনিক নেই বলে পুরসভার দাবি। কলকাতা পুরসভার ৯০ শতাংশের বেশি এলাকায় পাইপলাইনে ভূপৃষ্ঠের জল, মূলত হুগলি নদীর জল শোধন করে সরবরাহ করা হয়। যে সব এলাকায় ওই জলের সরবরাহ নেই বা জলের চাপ কম কিংবা কোনও বহুতলের বাসিন্দার সংখ্যা বেশি, সেখানে জলের জন্য ভূগর্ভস্থ নলকূপ বা গভীর নলকূপ খুঁড়তে পুরসভায় আবেদন করতে হয়। পুরসভা সব দিক খতিয়ে দেখে তবেই অনুমতি দেয়। কিন্তু আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স-এর চেয়ারম্যানের বক্তব্য, ওই সব নলকূপের জলই বিপজ্জনক।
পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা মনে করি না, কলকাতা পুর এলাকার ভূগর্ভস্থ জল পরীক্ষা করিয়ে পান করার দরকার আছে। ওই সব নলকূপ তো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ ওই কর্তার আরও দাবি, ‘‘আমরা নিয়মিত ভূগর্ভস্থ জল পরীক্ষা করে দেখি।’’