‘টক টু মেয়র’-এ মেয়র ফিরহাদ হাকিম।—ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুর এলাকার বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগ শোনার জন্য চালু হয়েছিল ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচি। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, শুধু কলকাতা নয়, আশপাশের পুরসভা, এমনকি রাজ্যের দূর-দুরান্তের জেলা থেকেও ফোন আসছে মেয়রের কাছে। সেই সব ফোন মেয়র ধরছেন এবং কোন ক্ষেত্রে কী করা দরকার, তার উপায়ও বাতলাচ্ছেন। যা দেখে পুরসভার অন্দরেই গুঞ্জন, তা হলে কি ভোটের কথা মাথায় রেখে শুধু মেয়র নন, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রেও এই প্রকল্পকে কাজে লাগাচ্ছেন তিনি?
ঠিক যে ভাবে ‘দিদিকে বলো’র ক্ষেত্রে রাজ্যের বাইরের বাঙালিরাও নিজেদের অভাব-অভিযোগ জানাচ্ছেন। ‘টক টু মেয়র’ কি অন্য ভাবে সেই পথেই হাঁটছে?
মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবশ্য এই যুক্তি মানতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক বড় বিষয় ‘দিদিকে বলো’। তার সঙ্গে ‘টক টু মেয়র’-এর কোনও তুলনাই টানা যায় না। এটা শুধুমাত্র কলকাতার পুর পরিষেবার জন্য। কলকাতার বাইরে থেকে ফোন এলে কার সঙ্গে কথা বলতে হবে, কোথায় যেতে হবে, সেই পরামর্শ শুধু দিই। যেটা আমার এক্তিয়ারে পড়ে না, সেটা বলে দিই। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই।’’
তিনি যখন ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে ফোনে কথা বলেন, তখন অধিকাংশ সময়েই অপেক্ষায় থাকে আরও অনেকগুলি কল। কম্পিউটারের পর্দায় ফুটে ওঠে সেই তথ্য। পুর তথ্য এ-ও বলছে, এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানে আসে অসংখ্য ফোন। যার বেশ কিছু ফোন কলকাতা পুর এলাকার বাইরেরও। যেগুলি এক সময়ে আটকানোর কথাও ভেবেছিলেন পুরকর্তারা। পুরসভা সূত্রের খবর, মেয়র ফিরহাদ হাকিম নাকি তাতে বেঁকে বসেন, তিনি সব ফোন ধরবেন বলেই ঠিক করেন।
যা দেখেশুনে পুরকর্তাদের একটি অংশের অনুমান, ‘টক টু মেয়র’ আদতে কলকাতার পুর পরিষেবা সংক্রান্ত কর্মসূচি হলেও বাইরের পুরসভায় কোথায় কী ঘটছে, তারও হদিস পেতে চাইছেন ফিরহাদ। কারণ, তিনি পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রীও বটে। ফলে আপাত ভাবে কলকাতার জন্য শুরু হলেও পরবর্তীকালে ‘রাজনৈতিক কৌশলগত’ কারণে এই অনুষ্ঠান অঘোষিত ভাবে ‘টক টু মন্ত্রী’ হয়ে গিয়েছে। তাই বাগুইআটি, দমদম তো বটেই, এমনকি গাইঘাটা-সহ অন্য জায়গা থেকেও ফোন আসছে। যেগুলি শুনে ফিরহাদ পরামর্শও দিচ্ছেন।
এখানেই প্রশ্ন, অন্য পুরসভার খোঁজ করতে গিয়ে কলকাতার নাগরিকদের সমস্যা শোনার বিষয়টা কি কিছুটা অবহেলিত হচ্ছে? বিশেষ করে যেখানে পুরকর্তারাই জানাচ্ছেন, একটি ফোনের সঙ্গে কথোপকথনের সময়ে অনেকগুলি ফোন প্রতীক্ষায় রয়েছে। গাইঘাটার ফোন ধরার সময়ে হয়তো বেলেঘাটার কোনও নাগরিক, যাঁর আক্ষরিক অর্থেই মেয়রের কাছে সমস্যা বলা প্রয়োজন তিনি প্রতীক্ষায় আছেন। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘কলকাতার নাগরিকের সমস্যা-অভিযোগ শুনতেই এই কর্মসূচির শুরু হয়েছিল। এখন বাইরের পুর এলাকা থেকেও ফোন আসছে। তাতে সময় এবং মূল উদ্দেশ্য দুই-ই নষ্ট হচ্ছে।’’
যদিও পুর প্রশাসন সে কথা উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, ‘টক টু মেয়র’-এ প্রবাসী ভারতীয়েরা ফোন করেছেন, এমনও হয়েছে। পুর প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বাইরের এলাকার ফোন প্রযুক্তিগত ভাবে আটকানোই যায়। কিন্তু ওই ব্যক্তির সমস্যা কলকাতা কেন্দ্রিক কি না তা বুঝতে গেলে তো ফোনটা ধরতে হবে।’’ যদিও পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, যে ভাবে ‘টক টু মেয়র’ এগোচ্ছে তাতে এটি যেন আস্তে আস্তে ‘দিদিকে বলো’র ‘ছোট সংস্করণ’ হয়ে উঠছে। তবে ‘দিদিকে বলো’তে বাইরের রাজ্য থেকেও ফোন আসে। যেখানে নাগরিকেরা সরাসরি নিজেদের ছোটখাটো সমস্যার কথাও বলতে পারেন।