সিন্ডিকেটের বেধড়ক ‘মার’, জখম মা-ছেলে

মায়ের নামে কটূক্তির প্রতিবাদ করেছিলেন ছেলে। তাই ছেলেকে রাস্তায় ফেলে মারধরের অভিযোগ উঠল ইট-বালি সরবরাহকারী এক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে রক্ষা পাননি মা-ও। মেরে তাঁর দু’টি আঙুল ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৬
Share:

বিধ্বস্ত: মার খাওয়ার পরে নিজের বাড়িতে জখম রাখি সাধুখাঁ ও তাঁর ছেলে দীপঙ্কর। বৃহস্পতিবার, চারু মার্কেটে। ছবি: মেহবুব কাদের চৌধুরী

মায়ের নামে কটূক্তির প্রতিবাদ করেছিলেন ছেলে। তাই ছেলেকে রাস্তায় ফেলে মারধরের অভিযোগ উঠল ইট-বালি সরবরাহকারী এক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে রক্ষা পাননি মা-ও। মেরে তাঁর দু’টি আঙুল ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বুধবার রাতের এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্তও কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, চারু মার্কেট থানা এলাকার ইজ্জাতুল্লাহ লেনের বাসিন্দা, পেশায় অটোচালক দীপঙ্কর সাধুখাঁ বুধবার রাত ১১টা নাগাদ মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। বাড়ির কিছুটা দূরেই কে পি দত্ত লেনের পাম্পঘরের কাছে ইটবোঝাই একটি ট্রাক তাঁর বাইকের সামনে চলে আসে। দীপঙ্করের কথায়, ‘‘জরুরি ফোন এসেছিল। কথা বলছিলাম। তাই দশ চাকার ইটবোঝাই ট্রাকটি সামনে এসে পড়লেও আমার সরতে কয়েক সেকেন্ড দেরি হয়। সেই অপরাধে সিন্ডিকেটের ছেলেরা আমাকে মা তুলে খুব বিশ্রী গালাগালি দেয়। আমি তখন চলে গেলেও মিনিট দশেক পরে যখন ফিরছি, তখন মনে হল, ওই ভাবে গালাগাল দেওয়ার বিরুদ্ধে কিছু বলা দরকার।’’ দীপঙ্করের অভিযোগ, ‘‘আমি প্রতিবাদ করতেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত অর্জুন, টুকাই, ভুদো, মেদো-রা আমার দিকে তে়ড়ে আসে। ধাক্কা মেরে আমাকে রাস্তায় ফেলে কিল-চড়-ঘুষি মারতে থাকে।’’ দীপঙ্কর জানান, মারের চোটে তাঁর ঠোঁট, কান ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে। ইতিমধ্যে এক প্রতিবেশী দীপঙ্করের মাকে খবর দেন। মা রাখি সাধুখাঁ ছুটে এসে ছেলেকে বাঁচাতে গেলে ওই যুবকেরা তাঁকেও রেয়াত করেনি বলে অভিযোগ। রাখিদেবীর বাঁ হাতের দু’টি আঙুল ভেঙে যায়।

মিনিট দশেক এই তাণ্ডব চলার পরে সিন্ডিকেটের ছেলেরা এলাকা ছেড়ে পালায়। রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে চারু মার্কেট থানায় যান রাখিদেবী। চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশই জখম মা ও ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেয় হাসপাতাল।

Advertisement

ইজ্জাতুল্লাহ লেনের একচিলতে ঘরে ছেলে দীপঙ্করকে নিয়ে থাকেন পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী রাখিদেবী। স্বামী বছর দশেক আগে মারা গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বিছানায় শুয়ে রয়েছেন দীপঙ্কর। উঠে বসারও ক্ষমতা নেই। ঠোঁট ফুলে রয়েছে। রাখিদেবীর অভিযোগ, ‘‘এলাকায় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য দিনদিন বাড়ছে। প্রশাসনের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ওদের বিরুদ্ধে একটু মুখ খোলা মানেই মানুষকে নাস্তানাবুদ হতে হবে।’’

এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সরু রাস্তার একপাশে ডাঁই করে রাখা ইট ও বালি। যার জেরে সঙ্কীর্ণ পরিসরে গাড়ি চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘ইট, বালি রাস্তার উপরেই পড়ে থাকবে। কোনও ভাবেই তার প্রতিবাদ করা যাবে না। সিন্ডিকেটের এই অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই। শাসক দলের প্রশ্রয়েই এদের রমরমা।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মমতা মজুমদার বলেন, ‘‘যাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে, তাদের আমি চিনি না। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে পুলিশের উচিত, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া।’’

মারধরের ওই ঘটনায় অভিযুক্ত চার জনের মধ্যে তিন জনকে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। চতুর্থ অভিযুক্ত অর্জুনের বক্তব্য, ‘‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আমি কোনও সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত নই। বুধবার রাতে ঘটনাস্থলে আমি ছিলামই না।’’ লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে। ঠিক কী ঘটেছিল, জানার চেষ্টা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement