ভাঙচুরের পরে। সুকান্ত নগরে। — নিজস্ব চিত্র
রাজারহাট-নিউ টাউনে সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য বন্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা, পুলিশের লাগাতার অভিযান। সল্টলেকে তোলাবাজির অভিযোগে এক কাউন্সিলর গ্রেফতার। কিন্তু তাতেও যে একাংশের হুঁশ ফিরছে না, রবিবার রাতভর বিধাননগর পুরসভার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে দু’দলের সংঘর্ষ তার প্রমাণ দিল।
রবিবার রাত দশটা থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলা ওই সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল সল্টলেকের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিনাথ পল্লি এলাকা। ঘটনায় দু’পক্ষের ৪ জন আহত হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। ঘটনায় গুলিও চলেছে বলে অভিযোগ। বিধাননগর দক্ষিণ থানায় দু’তরফেই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। সোমবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় অবশ্য কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। গুলি চলার অভিযোগও অস্বীকার করেছে পুলিশ। বিধাননগরের এক পুলিশকর্তা শুধু জানান, দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।
সোমবার ওই অঞ্চলে গিয়ে দেখা গেল, চারপাশ থমথমে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃণমূল নেতা নারায়ণ মণ্ডল, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর সর্দার এবং তাঁদের দলবলের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, ত্রিনাথ পল্লি এলাকায় একটি বিয়েবাড়ির সামনে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেই সময়ে স্থানীয় কয়েক জনের বাড়ি, দোকান ভাঙচুর হয়েছে। একটি অটো ভাঙচুর করার পাশাপাশি চালককেও মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। হামলার অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল নেতা নারায়ণ মণ্ডলের বাড়িতেও।
কেন এই গোলমাল?
প্রবীর এবং নারায়ণ দু’জনেরই অভিযোগ, এলাকার দখল ধরে রাখতে পরিকল্পিত ভাবেই এই হামলা হয়েছে। দু’তরফেই বক্তব্য, সরকারি জমি বেআইনি ভাবে বিক্রি করে দেওয়ার পাশাপাশি অনেক অনৈতিক কাজ হচ্ছে। সেই কাজে আটকে যাওয়াতেই এই হামলা। প্রবীর এবং নারায়ণ দু’জনেরই দাবি, আগেই তাঁরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে এবং দলীয় স্তরে মৌখিক ভাবে এই অভিযোগ করেছেন।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, তোলাবাজি, ভেড়ির দখলদারি এবং সরকারি জমি বেচার প্রক্রিয়ার দখলদারি নিয়ে ওই এলাকায় গোলমাল বাম আমল থেকে শুরু হয়েছে। এখনও শেষ হয়নি।
বিধাননগর পুরসভার মেয়র তথা রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। অভিযোগ খতিয়ে না দেখে মন্তব্য করব না।’’
বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। অভিযোগ খতিয়ে না দেখে মন্তব্য করব না। তবে দলের কেউ বেআইনি কাজে যুক্ত থাকলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। অভিযোগ প্রমাণ হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। তৃণমূলে থেকে এ সব করা যাবে না।’’ পাশাপাশি, সরকারি জমি বিক্রি করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা হবে।’’