R G Kar Medical College and Hospital

আরজি কর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হিসাবে গরমিলের অভিযোগ, তদন্ত রিপোর্ট জমা, চুপ স্বাস্থ্য ভবন

রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছর শুধু ১০ মে তারিখেই দাঁতের মাজন, সাবান, টি-ব্যাগ, তোয়ালে কেনা হয়েছে ৯৪ হাজার টাকার! ২৫ জুন চা-কফি এবং ফুলের সাজসজ্জায় খরচ এক লক্ষ টাকার বেশি।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩ ০৬:২৪
Share:

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যের প্রথম সারির একটি মেডিক্যাল কলেজ। আর তাকে ঘিরে কয়েক কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়েই এখন চাপে রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

মেডিক্যাল কলেজের নাম আর জি কর। সেখানে ২০২২-’২৩ সালের দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক লিখিত অভিযোগ এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত হাসপাতালের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, গত বছর শুধু ১০ মে তারিখেই দাঁতের মাজন, সাবান, টি-ব্যাগ, তোয়ালে কেনা হয়েছে ৯৪ হাজার টাকার! ২৫ জুন চা-কফি ও ফুলের সাজজ্জায় খরচ এক লক্ষ টাকার বেশি। ২০ জুন ওয়াইফাই সংযোগে খরচ হয়েছে ৯৯৭১০ টাকা। এক দিনে ৭৮ হাজার টাকা খাবারের জন্য ব্যয় হয়েছে। সোফা কেনা হয়েছে ৮৪ হাজার টাকার। ২৫ জুন সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করা হয়েছে ৩৭ হাজার টাকার। এই সব খরচ হয়েছে অ্যাকাডেমিক তহবিল থেকে, যা অবৈধ। ২০২২ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ২৬ জুনের মধ্যে আর জি করের অ্যাকাডেমিক তহবিল থেকে এ ভাবে ১০ লক্ষ ২৩ হাজার ২২৩ টাকার বিভিন্ন জিনিস কেনা হয়েছে।

যে সংস্থা জল ঠান্ডা রাখার যন্ত্র বা সাউন্ড সিস্টেম হাসপাতালকে সরবরাহ করেছে, তাদের থেকেই চাদর, দাঁত মাজার ব্রাশ, পর্দা কেনা হয়েছে! আবার ওই সংস্থাই স্মরণিকা ছাপিয়েছে, ফুলের সাজসজ্জা করেছে, ওয়াইফাই সংযোগও দিয়েছে। পরবর্তী কালে তারাই আর জি করের ‘স্কিল ল্যাব’-এর জন্য আড়াই কোটি টাকার যন্ত্র সরবরাহ করেছে!

Advertisement

২০২২-’২৩ সালে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুর্নীতি সংক্রান্ত যে তথ্য স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়েছে, তাতে রয়েছে পূর্ত দফতরকে ব্রাত্য রেখে স্থানীয় ঠিকাদার সংস্থাকে দিয়েই সিভিল ও ইলেক্ট্রিক্যাল কাজ করানোর প্রসঙ্গ। নথিতে দেখা গিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত হাসপাতাল চত্বরে একাধিক কাফেটেরিয়া ও স্টল তৈরি, সরকারি জায়গায় বাগান তৈরি, আর জি করের অ্যানেক্স হাসপাতাল ইন্দিয়া মাতৃসদনের সিভিল ও ইলেক্ট্রিক্যাল কাজ—সব কিছু হয়েছে পূর্ত দফতরকে বাদ দিয়ে।

তথ্য-সহ অভিযোগে জানা যাচ্ছে, এই সব কাজের জন্য অধ্যক্ষের কাছে লিখিত আবেদন এসেছিল কলেজের ছাত্র সংগঠনের তরফ থেকে। প্রতি বারই ছাত্র সংগঠন যে দিন স্বাক্ষরহীন সেই আবেদনপত্র পাঠিয়েছে, সে দিনই কোটেশন ডেকেছেন অধ্যক্ষ। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির অধিকাংশের বৈধ লাইসেন্সও পাওয়া যায়নি। কোটেশনের নীচে সেই বিষয়ে সতর্ক করে হিসাবনিরীক্ষক তাঁর নোট দিয়েছিলেন। অবশ্য লাভ হয়নি। হাসপাতালের কাফেটেরিয়া, স্টল ও শৌচাগার থেকে টাকা বেআইনি ভাবে গিয়েছে তৃণমূল ছাত্র সংগঠনে, সেই সবের তথ্যপ্রমাণও মিলেছে।

রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের সদস্যদের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১১২০০ টাকা খরচ করে উপহার ও মিষ্টি কিনে দেন। যদিও কোনও মেডিক্যাল কলেজের তরফ থেকে এ ভাবে উপহার দিলে সেটি ঘুষ হিসেবে গণ্য হয়।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তদন্তে ব্যাপক দুর্নীতির প্রমাণ মিললেও কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কলকাঠিতে স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তারা কার্যত হাত গোটাতে বাধ্য হচ্ছেন। যিনি এই হাসপাতালের অধ্যক্ষ থাকাকালীন দুর্নীতি তুঙ্গে ওঠার অভিযোগ, সেই সন্দীপ ঘোষকে সম্প্রতি বদলি করা হয়েছিল। যদিও দু’দিনের মধ্যে এক অদৃশ্য জাদুর ছোঁয়ায় তিনি আবার স্বস্থানে বহাল হয়েছেন।

আর জি করে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি এবং আরও দুই সিনিয়র চিকিৎসককে নিয়ে গড়া হয়েছিল তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। সেই তিন জনকেই বদলি করে দেওয়া হয়েছে। আখতার আলির কথায়, ‘‘আর জি করে দুর্নীতি নিয়ে আমরা যখন রিপোর্ট জমা দিই, হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির তৎকালীন চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায় দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। অধ্যক্ষের অফিস এবং স্বাস্থ্য ভবন থেকেও হুমকি এসেছিল। এর পরেই আমাদের বদলি করা হয়। তদন্ত চাপা পড়ে যায়।’’

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম মন্তব্য করতে চাননি। ফোন ধরেননি অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, মেসেজেরও উত্তর দেননি। সুদীপ্ত রায়ের দাবি,‘‘আমি কাউকে হুমকি দিইনি। এমন দুর্নীতি যে হচ্ছে, জানতাম না।’’ (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement