স্বাস্থ্য দফতর। —ফাইল চিত্র।
বেলা ১২টার সময়ে সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখাতে এসেছিলেন যে রোগী, দুপুর
তিনটের সময়ে দেখা গেল, তাঁর অস্ত্রোপচার হচ্ছে ওই হাসপাতাল থেকে কয়েকশো মিটার দূরের একটি নার্সিংহোমে! সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, চিকিৎসক সেই এক জনই! স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে সম্প্রতি এমনই কিছু অনৈতিক ঘটনা নজরে এসেছে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের। তাঁদের অনুমান, এক শ্রেণির চিকিৎসক ও কর্মী এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকছেন। প্রমাণ মিললে এ বার তাঁদের বিরুদ্ধে তো বটেই, সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিল স্বাস্থ্য দফতর।
বুধবার রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা এ বিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করেছেন। সূত্রের খবর, জেলার সরকারি হাসপাতালে প্রায়ই দেখা যায়, সেখানে উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও রোগী পার্শ্ববর্তী কোনও নার্সিংহোমে গিয়ে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ভর্তি হয়েছেন। এমন কেন হবে, তা নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ছিল স্বাস্থ্যকর্তাদের। এ দিনের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, জেলার পাশাপাশি ব্লক স্তরের সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামোরও ব্যাপক উন্নতি করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেখানে রোগী এলেও তাঁরা চলে যাচ্ছেন আশপাশের নার্সিংহোমে।
এ-ও দেখা গিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে কেউ ভর্তি হওয়ার পরেও আচমকা চলে যাচ্ছেন পাশের কোনও নার্সিংহোমে। যে কোনও শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই প্রবণতা খুব বেশি বলে পর্যবেক্ষণ স্বাস্থ্য ভবনেরও। স্বাস্থ্যকর্তারা জেনেছেন, এই ধরনের ঘটনার নেপথ্যে সরকারি হাসপাতালের এক শ্রেণির চিকিৎসক ও কর্মী জড়িত থাকছেন। এ দিনের নির্দেশিকায় তাই স্পষ্ট বলা হয়েছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক আর কোথাও স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে চিকিৎসা করতে পারবেন না।
অন্য দিকে, কড়াকড়ি করা হয়েছে হাঁটু এবং হিপ জয়েন্ট প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বেসরকারি হাসপাতালে ওই অস্ত্রোপচার করাতে হলে অবশ্যই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। জানা যাচ্ছে, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে ৫৫ বছরের কমবয়সিদের ক্ষেত্রে এই দু’টি অস্ত্রোপচারের খরচ মেলে না।
রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ওই অস্ত্রোপচারে কোনও বয়স বেঁধে দেওয়া হয়নি ঠিকই। তবে, সরকারি হাসপাতালের অস্থি চিকিৎসকের ছাড়পত্র অবশ্যই লাগবে। সেটাই পরবর্তী সময়ে খতিয়ে দেখা হবে।’’ একই ভাবে রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতাল থেকে যাতে অকারণে অস্থি রোগের চিকিৎসার জন্য রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো না হয়, সে দিকেও সতর্ক নজর রাখতে বলা হয়েছে।