Kasba attempt to murder case

মমতা-সাক্ষাৎ চান, ববিকে আর্জি সুশান্তের! ‘বিরোধী’ মন্ত্রী-কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকতে চাইছেন কি

খুনের চেষ্টার ঘটনার পর বুধবার প্রথম বার কলকাতা পুরসভায় যান সুশান্ত। পুরসভায় গিয়ে সোজা চলে যান ববির ঘরে। দীর্ঘ ক্ষণ তাঁদের বৈঠক হয়। সেই সময়েই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ২১:১৬
Share:

(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, সুশান্ত ঘোষ। —ফাইল ছবি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন তিনি। বুধবার কলকাতা পুরসভায় গিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (ববি) সঙ্গে দেখা করে সেই ইচ্ছার কথা জানিয়ে এলেন তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ। সুশান্ত যে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, তা কসবা এলাকার মধ্যে পড়ে। শাসকদল তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীবিবাদের’ জন্য পরিচিত সেই এলাকা। সেখানে কসবার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ খান এবং পাশের ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লিপিকা মান্নার সঙ্গে সুশান্তের ‘বিবাদ’ও সুবিদিত। প্রশ্ন উঠছে, মমতার সঙ্গে দেখা করে কি সেই জাভেদ এবং লিপিকার বিরুদ্ধেই নালিশ জানাতে চাইছেন সুশান্ত?

Advertisement

তাঁকে খুনের চেষ্টার ঘটনার পর বুধবার প্রথম বার কলকাতা পুরসভায় যান সুশান্ত। পুরসভায় গিয়ে সোজা চলে যান ববির ঘরে। দীর্ঘ ক্ষণ তাঁদের বৈঠক হয়। সেই সময়েই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন সুশান্ত। পুরসভা সূত্রে খবর, মেয়রও তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সুশান্ত-ঘনিষ্ঠদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে চাইছেন কাউন্সিলর। পাশাপাশি, কসবা এলাকার রাজনীতি নিয়েও তিনি কথা বলতে চাইছেন।

সাম্প্রতিক কালে কসবা এলাকার রাজনীতি বার বার আলোড়িত হয়েছে শাসকদলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীবিবাদের জেরে। কাঁচা টাকার রমরমাই কসবাকে বার বার উত্তপ্ত করে তুলছে, যে কাঁচা টাকার উৎস মূলত ফাঁকা জমি। সেই জমিতে মাথা তুলেছে গগনচুম্বী বহুতল, সেই বহুতলে ব্যবহৃত ইমারতি দ্রব্যের সিন্ডিকেট। বাড়ি, ফ্ল্যাট, কর্পোরেট সংস্থার অফিস গড়ে উঠে কলকাতার ওই প্রান্ত এখন ‘উন্নয়নশীল’ এলাকা। আশ্চর্য নয় যে, ওই এলাকাকে কেন্দ্র করে ‘দলাদলি’ থাকবে।

Advertisement

গত শুক্রবার সুশান্তকে যেখানে খুন করার চেষ্টা হয়েছিল, সেই জায়গাটি ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর বাড়ির সামনে। যেখান থেকে মেরেকেটে ৪০০ মিটার দূরে রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের বাড়ি। অদূরেই পরিচিত শপিংমল। সেখানে রাত পর্যন্ত লোকজন থাকেন। সেই জনবহুল জায়গায় এই রকম ঘটনা নানা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত সুশান্তই ছিলেন এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। কিন্তু গত পুর নির্বাচনে ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় সুশান্তকে তৃণমূল লড়তে পাঠায় পাশের ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে। ১০৭-এ প্রার্থী করা হয় লিপিকাকে। দু’জনেই জিতেছেন। তার পর থেকেই কসবায় গোষ্ঠীলড়াই বেড়েছে বলে অভিমত শাসকদলের অনেকের। কসবার রাজনীতিতে দীর্ঘ দিন ধরে জাভেদের সঙ্গে সুশান্তের সম্পর্ক ‘মধুর’। আবার তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে লিপিকা ‘জাভেদের লোক’ বলে পরিচিত। যদিও শুক্রবারের ঘটনা নিয়ে জাভেদ বা লিপিকা কেউই বিশেষ কিছু বলেননি। তাঁদের একটাই কথা, প্রশাসন যা করার করবে।

তবে তৃণমূল সূত্রে খবর, লিপিকা কাউন্সিলর হওয়ার পর এলাকায় দলের অন্দরের সমীকরণেও বদল হয়েছে। সুশান্তের হয়ে যে বাহিনী কাজ করত, তাদের অনেকেই এখন কোণঠাসা। তাদের জায়গায় মাথা তুলেছে সুশান্তের ‘বিরোধী’ লিপিকার বাহিনী। সেই বিষয়টি নিয়ে মমতার কাছে সুশান্ত নালিশ জানাতে চাইছেন বলে দাবি শাসকদলের একাংশের। তাঁদের এ-ও দাবি, সুশান্তের ‘কোণঠাসা’ হওয়ার নেপথ্যে পুলিশের একাংশের ভূমিকাও রয়েছে। হতে পারে, সেই বিষয়টি নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাতে চাইছেন সুশান্ত।

আবার তৃণমূলের অন্য একটি অংশের মত, নতুন ওয়ার্ডে জেতার পরেও সুশান্ত পুরনো ওয়ার্ডে ‘আধিপত্য’ কায়েম রাখতে চান। যার জন্যই বার বার সংঘাতের আবহ তৈরি হচ্ছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়েও নিজের মতো করে ‘বাহিনী’ সাজিয়েছেন সুশান্ত। অন্যদের সেখানে ঘেঁষতে দিচ্ছেন না তিনি। তা-ও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতের একটি কারণ হয়ে থাকতে পারে।

সুশান্ত অবশ্য এই বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। বুধবার পুরসভায় মেয়রের সঙ্গে বৈঠকের পর বাইরে বেরিয়ে তিনি শুধু জানিয়েছেন, নিজের ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাজের বিষয়ে আলোচনা করতেই এসেছিলেন তিনি। পুরসভা সূত্রে খবর, বৈঠকে ববিও তাঁর কাছে কসবার রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজকর্ম কেমন চলছে, জানতে চান তা-ও। কাউন্সিলর ছাড়াও ১২ নম্বর বোরো কমিটির চেয়ারম্যান সুশান্ত। তাঁর অধীনে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড রয়েছে। সেই সব ওয়ার্ড নিয়েও মেয়রের সঙ্গে সুশান্তের আলোচনা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement