Stagnant Water

Jadavpur University: জমা জলের সমস্যা মেটাতে সমীক্ষার ভার যাদবপুরকে

নিম্নচাপের জেরে গত সোম এবং মঙ্গলবারের টানা বৃষ্টির জমা জল বৃহস্পতিবারেও সরেনি বেশ কিছু এলাকা থেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৪৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

টানা বৃষ্টি হলেই জল জমছে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বৃষ্টি থামলেও সহজে নামছে না সেই জমা জল। এ বার তাই শহরের নিকাশি সমস্যার সমাধানে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

শহরের এমন বহু অংশ, যেখানে আগে জল জমত না, এ বছর সেখানেও টানা বৃষ্টিতে জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। জমা জল সরতেও দেরি হচ্ছে। তাই পুর এলাকার ১৪৪টি ওয়ার্ডের ব্রিটিশ আমলের নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার করতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে সমীক্ষা করাচ্ছে পুরসভা।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সাধন ঘোষের সঙ্গে পুর নিকাশি দফতরের আধিকারিকদের বার তিনেক বৈঠক হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুর নিকাশি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত, প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তারক সিংহ বলেন, ‘‘নিকাশি সংস্কারে ওঁদের থেকে প্রস্তাব চেয়েছি।বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট হাতে পেলেই আমরা কাজে হাত দেব।’’ আর সাধনবাবু বলছেন, ‘‘পুরসভার সঙ্গে বৈঠকের পরে আমরা একটি প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করেছি। বৃষ্টিতে কলকাতায় কী কারণে জল জমছে, কোথায় কোথায় জমছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।আশা করছি ৫-৬ মাসের মধ্যে পুরসভাকে রিপোর্ট জমা দেব। এই কাজ বাস্তবায়িত হলে কলকাতার জল জমার সমস্যা অনেকটাই দূর হবে।’’

Advertisement

কী ভাবে হবে এই নিকাশি সংস্কার? কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, বৃষ্টির জল প্রথমে শহরের নিকাশি নালাগুলির মাধ্যমে পাম্পিং স্টেশন এবং সেখান থেকে বিভিন্ন খালে গিয়ে পড়ে। তাই বৃষ্টির সময়ে শহরের সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির নিকাশি নালা, পাম্পিং স্টেশন এবং খাল— এই তিনটির জলধারণ ক্ষমতা কতটা, তা পরখ করে দেখতে চায় পুরসভা। সমীক্ষায় এই তিন ক্ষেত্রে সমস্যা ধরা পড়লে, কী ভাবে তা সমাধান করা সম্ভব তা-ও জানাবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। তারক বলেন, ‘‘প্রতিটি ওয়ার্ড ধরে ধরে কোন এলাকায় কত বৃষ্টি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। বর্ষায় এখন শহরে দৈনিক ২০০ মিলিমিটার পর্যন্তও বৃষ্টি হয়। সেই অনুযায়ী, ওই বৃষ্টির জল সরানোর মতো ক্ষমতা ওই ওয়ার্ডের নিকাশি নালার আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে যাদবপুর। তা যদি না থাকে, তা হলে কী উপায়, সেটাও জানাবে তারা।’’ একই ভাবে পাম্পিং স্টেশনের ধারণক্ষমতা রয়েছে কি না, সেটাও যাচাই করা হবে।

আর নিকাশি নালা থেকে শহরের যে সমস্ত খালে বৃষ্টির জল গিয়ে পড়ছে, সেই সব খালের নাব্যতা নির্ণয় করা হবে। তারকের ব্যাখ্যা, ‘‘বৃষ্টির সময়ে শহরের সমস্ত নিকাশির জল পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে খালে গিয়ে পড়ে। কিন্তু খালগুলির নাব্যতা, জলধারণ ক্ষমতার বিষয়ে কোনও পরিসংখ্যানই পুরসভার কাছে নেই। সেই সংক্রান্ত তথ্যই সমীক্ষা রিপোর্টে থাকবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পুরো রিপোর্ট দেওয়ার পরেই তা আমরা সেচ দফতরকে দিতে পারব।’’ যাদবপুরের পরামর্শ মতো কাজ করতে পারলে শহরে জল জমার সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে দাবি পুর প্রশাসকমণ্ডলীর ওই সদস্যের।

প্রসঙ্গত, নিম্নচাপের জেরে গত সোম এবং মঙ্গলবারের টানা বৃষ্টির জমা জল বৃহস্পতিবারেও সরেনি বেশ কিছু এলাকা থেকে। এখনও জলের নীচে রয়েছে পুরসভার সংযুক্ত এলাকা, ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের জোকা। বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত জলমগ্ন ছিল বাইপাসের আনন্দপুর, পঞ্চান্নগ্রাম, মাদুরদহ, পাটুলির বিভিন্ন অংশ। বাদ যায়নি খিদিরপুর, একবালপুরের বিভিন্ন রাস্তা, বেহালার শকুন্তলা পার্ক, সরশুনার একাংশও। তবে সব থেকে বেহাল দশা জোকার দু’নম্বর পোল এলাকা, সেখানে ৩৫টি আবাসন বৃহস্পতিবারেও জলমগ্ন।

অভিযোগ, বৃষ্টির সময়ে বেহালার চৌরাস্তা, শখেরবাজার, শীলপাড়া এলাকার জমা জল পাম্প করে জোকার নিচু এলাকায় ফেলে দেওয়ায় সেখানে দিনের পর দিন জল জমে থাকে। ফলে সেখানেম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ারও আশঙ্কা করছেন পুর স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ প্রসঙ্গে তারক বলছেন, ‘‘জোকা এলাকা নিচু হওয়ায় ওখানে জল জমছে। যাদবপুরের সমীক্ষার কাজ শেষ হলে শহরের নিকাশি ব্যবস্থার ছবিটা জানতে পারব। সেই অনুযায়ী কাজ শেষ হলে আশা করছি জল-যন্ত্রণার থেকে মুক্তি পাবেন শহরবাসী।’’

আর তার আগে? তত দিন বৃষ্টি হলে জল জমার সমস্যা থেকে আপাতত মুক্তি নেই শহর কলকাতার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement