ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন ঝুনু দত্ত। —নিজস্ব চিত্র।
প্রোমোটারদের সঙ্গে ঝামেলা মেটাতে শরণাপন্ন হয়েছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলরের। কিন্তু, সেই ঝামেলা মেটানো তো দূরের কথা। উল্টে কাউন্সিলরের অনুগামীরাই তাঁদের মারধর ও শ্লীলতাহানি করেছেন বলে অভিযোগ দমদমের এক মহিলা এবং তাঁর মেয়ের।
অভিযোগের তির, দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীদের দিকে। ওই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা জয়া দত্ত এবং তাঁর মেয়ে ঝুনু দত্তের অভিযোগ, দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় আলোচনা করার সময় তাঁদের মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয়। যদিও গোটা অভিযোগই অস্বীকার করেছেন দেবাশিসবাবু। তবে এ নিয়ে পুলিশ তো বটেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরেরও দ্বারস্থ হয়েছেন জয়া দত্ত।
ঘটনার সূত্রপাত, গত ৩ অগস্ট দমদমের দাগা কলোনিতে। সৌমেন ভৌমিক এবং সুনিতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে দুই প্রোমোটার এলাকার একটি বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট তৈরি করার জন্য নেন। ওই বাড়িতে দীর্ঘ দিন ধরে ভাড়া থাকেন অভয় দত্ত এবং তাঁর স্ত্রী জয়া দত্ত। তাঁদের একটি ফ্ল্যাট দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতিও দেন ওই প্রোমোটারেরা। সেই মতো গত বছরের ১১ ডিসেম্বর প্রোমোটার-ভাড়াটের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
আরও পড়ুন
হুঁশিয়ারি সার! অটো প্রত্যাখানের প্রতিবাদ করায় তরুণীকে চড়, গ্রেফতার চালক
মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন জয়া দত্ত ও তাঁর পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।
চুক্তি অনুযায়ী, ধাপে ধাপে কুড়ি হাজার টাকা করে প্রোমোটারদের দেওয়ার কথা পাকা হয় ভাড়াটের। সেই মতো জয়া দত্ত একটি চেক কেটে দেন প্রোমোটারদের। কিন্তু, প্রোমোটারেরা সেই চেক-এর টাকা না তোলায় আশঙ্কা বাড়ে জয়া দত্ত ও তাঁর পরিবারের। এর সুরাহা করতেই স্থানীয় কাউন্সিলর দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের শরণাপন্ন হন তাঁরা। অভিযোগ, সেই আলোচনা চলাকালীন জয়া দত্ত এবং তাঁর মেয়ে ঝুনু দত্তকে মারধর করেন অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরিন্দম আচার্য নামে প্রোমোটার এবং কাউন্সিলরের বেশ কিছু অনুগামী।
আরও পড়ুন
গরিব-বড়লোক নির্বিশেষে রাজ্যের সব মেয়েই এখন কন্যাশ্রীর আওতায়
আলোচনার বিষয়টি মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করছিলেন জয়া দত্তের মেয়ে ঝুনু দত্ত। সেই সময়ই তা দেখে ফেলেন এক জন। এর পর ঝুনু দত্তের উপর চড়াও হয়ে তাঁর মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মারধর করা হয় মা-মেয়ে, দু’জনকেই। কোনও ক্রমে সেখান থেকে পালিয়ে ঘুঘুডাঙ্গা ফাঁড়িতে পৌঁছন তাঁরা। এর পর সমস্ত ঘটনা পুলিশকে জানান। ঝুনু দত্তের অভিযোগ, ৩ তারিখের পর থেকে পুলিশ কোনও রকম ব্যবস্থা নেয়নি। সে কারণেই অভিযুক্তরা এখনও এলাকায় এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার উল্লেখ করে পোস্ট করেন। ফলে চেনা-পরিচিতের কাছ থেকে নানা কটূ মন্তব্য শুনতে হয় বলে অভিযোগ। অবশেষে ব্যারাকপুর কমিশনারেটে গিয়ে পুলিশ কমিশনারের দফতরে অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে গিয়েও একই অভিযোগ করে প্রোমোটারদের এবং কাউন্সিলরের অনুগামীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির দাবি করে জয়া দত্তের পরিবার।
গোটা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও কাউন্সিলর দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না তিনি। ওই ভাড়াটেদের সঙ্গে প্রোমোটারদের কী চুক্তি হয়েছিল তা জানেন না বলেও দাবি তাঁর। পাশাপাশি, চুক্তিপত্রে কাউন্সিলরের কোন স্বাক্ষর থাকলে তিনি কাউন্সিলর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন বলেও দাবি করেন। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় মদত দেওয়ার যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে সে অভিযোগও অস্বীকার করেছেন দেবাশিসবাবু।