আশঙ্কা ছিলই। বাস্তবেও তা-ই হল। শাসক দলের ছাত্র-যুবদের পাল্টা মিছিলের জেরে শুক্রবারও দুর্ভোগ পোহাতে হল শহরবাসীকে।
হাওড়া যাওয়ার জন্য এ দিন বিকেলে পার্ক সার্কাস থেকে বাসে উঠেছিলেন বিভূতি সাহা। মিছিলের ফাঁসে আটকে চল্লিশ মিনিটের পথ পেরোতে সময় লেগে গেল পৌনে দু’ঘণ্টা। বৃহস্পতিবারও একই রকম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল নিত্যযাত্রীদের। নারদা-কাণ্ডে শাসক দলের যে সব নেতাদের দিকে আঙুল উঠেছে, তাঁদের শাস্তির দাবিতে মিছিল করেছিল বামেরা। শুধু পথটা ছিল উল্টো। বামেরা মিছিল করে ওয়াই চ্যানেল থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত। শুক্রবার তৃণমূলের মিছিলের পথ ছিল শিয়ালদহ থেকে ওয়াই চ্যানেল পর্যন্ত।
স্টিং-ভিডিও ছড়িয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে কুৎসা করার প্রতিবাদেই এ দিন মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর থেকে এস এন ব্যানার্জি ধরে মিছিল আসে ধর্মতলায়। যার জেরে শিয়ালদহ, মৌলালি ক্রসিং, লেনিন সরণি, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে বহু গাড়ি আটকে পড়ে। যানজটের ফাঁসে আটকে নাজেহাল হতে হয় বহু যাত্রীকে।
বিরোধী বামদের মিছিলের মতোই শুক্রবারেও শাসকদলের ছাত্র-যুবদের মিছিল নিয়ে আশঙ্কায় ছিল পুলিশ। আশঙ্কা ছিল, এমনিতেই বিকেলে অফিস ফেরত যাত্রীদের ভি়ড় থাকে। সে সময়ে শিয়ালদহ, এস এন ব্যানার্জি রোড, ধর্মতলা মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা আটকানোয় গাড়ি চলাচল ব্যাহত হবে। যার ফলে ভুগতে হবে সাধারণ মানুষকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মিছিলের সময়ে এ দিন মৌলালি থেকে কোনও গাড়ি এস ব্যানার্জি রোডে না ঢুকিয়ে সোজা উত্তর দিকে পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। দক্ষিণগামী গাড়ির ক্ষেত্রেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
কাজের দিনে পথেঘাটে মিছিল করা বামেদের ক্ষেত্রে নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো আশ্বাস দিয়েছিলেন, শহরের প্রাণকেন্দ্রে মিছিল বরদাস্ত করা হবে না। যদিও তিনি নিজে বা তাঁর দল বারবারই ধর্মতলা চত্বরে মিছিল করার বহু নজির রেখেছেন।
এ দিন যানজটে আটকে থাকা পথচারীদের অনেককেই বলতে শোনা যায়, কাজের দিনে রাস্তা আটকে শাসক-বিরোধীর এই লড়াইয়ের খেসারত বরাবর সাধারণ মানুষকেই দিতে হয়েছে। এর থেকে রেহাই মেলার উপায় আছে কি?
যানজটে আটকে থাকা যাত্রীদের এই সব আলোচনার মধ্যেই মিছিল ধর্মতলায় পৌঁছলে সমর্থকদের তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা নিজের নিজের এলাকায় তাড়াতাড়ি ফিরে যান। গাড়ি চলাচলের জন্য আমাদের রাস্তা ছেড়ে দিতে হবে। সাধারণ মানুষের অসুবিধা যাতে না হয় সেটাও দেখতে হবে।’ ততক্ষণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে। মিছিলের জেরে ধর্মতলার বিভিন্ন মোড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি।