অঘটন: লন্ডভন্ড ফ্ল্যাটে দেবাশিস রায়। (ইনসেটে) স্বাতী রায়। শনিবার, কেষ্টপুরে। ছবি: সুমন বল্লভ
কেষ্টপুরের হানাপাড়ায় শুক্রবার রাতে একটি ফ্ল্যাটে রান্না করার জন্য আভেন জ্বালাতে গিয়েছিলেন গৃহকর্ত্রী। হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ফ্ল্যাট। গুরুতর জখম ওই বধূকে ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর নাম স্বাতী রায় (৪৮)। তিনি কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের আধিকারিক দেবাশিস রায়ের স্ত্রী। স্বাতীদেবীর শরীরের বেশির ভাগই পুড়ে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
মহিলার বয়ান নথিভুক্ত করার পরে পুলিশের দাবি, রান্না করার সময়ে বিস্ফোরণের জেরেই এই ঘটনা। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গ্যাস লিক করেই এমন অঘটন ঘটে থাকতে পারে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গৃহকর্তা দেবাশিসবাবুর সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জেনেছেন, শুক্রবার রাত দশটা নাগাদ তিনি ও তাঁর শ্যালক পার্থ দে খাওয়ার ঘরে বসে ছিলেন। স্বাতীদেবী ছিলেন রান্নাঘরে। আচমকা বিস্ফোরণে ঘর কেঁপে ওঠে। রান্নাঘর ও ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে পড়ে। ঘরের কয়েকটি জানলার কাচও ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ঘরের জিনিসপত্রও উল্টে যায়। প্রায় একই অবস্থা হয় ওই বহুতলের দোতলার একটি ফ্ল্যাটে।
দেবাশিসবাবুর দাবি, ঘটনার অভিঘাত সামলে রান্নাঘরে গিয়ে তিনি দেখেন, স্ত্রী অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে আছেন। ছুটে আসেন প্রতিবেশীরাও। স্বাতীদেবীকে প্রথমে চিনার পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে বাইপাসের অন্য এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশের দাবি, ঘটনাটি রাত ১০টা নাগাদ ঘটলেও তারা তিনটে নাগাদ খবর পায়। দেবাশিসবাবুর দাবি, তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পুলিশে জানাতে পারেননি।
এই ঘটনায় ধন্দে পড়ে বিধাননগর পুলিশ। কারণ, রান্নাঘরে গিয়ে তারা দেখে, গ্যাস সিলিন্ডার ও আভেন অক্ষত। এমনকি, রান্নাঘরের জানলাও অক্ষত। ফলে বিস্ফোরণের উৎস নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দেয়। শনিবার দুপুরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ওয়াসিম রাজা এবং এস কে ঘোষের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। ওই বিশেষজ্ঞদের অনুমান, গ্যাসের পাইপে ছিদ্র থেকে গ্যাস লিক করে থাকতে পারে। সেই গ্যাস সম্ভবত ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে, কারণ তা বাতাসের থেকে ভারী। এর মধ্যেই অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণ। একেই বলে ‘এলপিজি ভেপার ক্লাউড এক্সপ্লোশন’। তাঁদের আরও অনুমান, ওই সময়ে ফ্ল্যাটের বন্ধ ঘরে এসি চলছিল। ঘটনার আগে রান্না হয়েছিল। সম্ভবত সে সময়ে সিলিন্ডারের মুখটি বন্ধ করা হয়নি। এর পরে ফের গ্যাস জ্বালাতে যেতেই বিপত্তি ঘটে। তবে গ্যাস লিকের গন্ধ কেন দেবাশিসবাবুরা পেলেন না, তার উত্তর পায়নি পুলিশ।
ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানান, আগে কসবাতেও এক বার একটি বাড়িতে এমন বিস্ফোরণ ঘটেছিল।
গ্যাস সিলিন্ডার ও পাইপ নিয়ে সতর্ক হতে বলছেন তাঁরা। দেবাশিসবাবু বললেন, ‘‘আমার চাকরি জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি।’’