উচ্ছ্বাস: আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় উদ্যাপনে স্কটিশ চার্চ কলেজের পড়ুয়ারা। সোমবার, হেদুয়ায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
কলেজের সামনে ভিড় করে দাঁড়ানো ছেলেমেয়েদের অধিকাংশের গায়েই নীল-সাদা জার্সি। কয়েক জন নীল-সাদা পতাকা হাতে রাস্তায় ছোটাছুটি করছেন। স্কটিশ চার্চ কলেজের সামনে ওই পড়ুয়াদের ভিড় যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে যানজট। এর মধ্যে ধীর গতিতে এগোনো একটি স্কুলগাড়ি ভিড়ের সামনে পৌঁছতেই গাড়ির জানলা থেকে বাইরে বেরিয়ে এল ছোট্ট কয়েকটি মুষ্টিবদ্ধ হাত। সেই সঙ্গে ‘মেসি, মেসি’ চিৎকার।
শুধু কলেজের সামনের রাস্তাতেই নয়। আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ে রাতের উৎসবের রেশ এ ভাবেই শহরে বজায় থাকল সোমবারও। প্রিয় দলের কাপ-জয়ের আনন্দে কোথাও মেসির বিরাট কাট আউট-সহ মিছিল বেরোল, কোথাও অলিগলি নীল-সাদা পতাকায় মুড়ে চলল পিকনিকের আয়োজন। কোথাও আবার আস্ত বাসস্টপই মুড়ে দেওয়া হল আর্জেন্টিনার পতাকা ও খেলোয়াড়দের ছবিতে।
৩৬ বছর পরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ হাতে নেওয়ার আনন্দে সোমবার রাতে পথে নেমেছিল কলকাতা। গোটা রাত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে চলে উৎসব। দক্ষিণের যাদবপুর, নেতাজিনগর, বাঘা যতীন, পাটুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে উত্তরের উল্টোডাঙা, হেদুয়া, নিমতলা লেন। নেতাজিনগরে বড় স্ক্রিনে খেলা দেখানোর আয়োজন হয়েছিল। ম্যাচের শেষে উৎসবের রেশ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, সামালদিতে রাতভর পাহারা দিতে হয় পুলিশকে। যাদবপুরের ৮বি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জয়োৎসবের জেরে গাড়ি চালাতে গিয়ে রাতে হিমশিম খান চালকেরা।
এ দিন সকালে মেসির কাট আউট, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল বেরোয় পাটুলির ৪৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে। জয়ের আনন্দে পাটুলির আর্জেন্টিনা ফুটবল ফ্যান ক্লাবের উদ্যোগে ২২ ডিসেম্বর শহরে মোটরবাইক এবং ঘোড়ার গাড়ির মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানালেন উদ্যোক্তারা। এক উদ্যোক্তা হ্যাপি সাহা বলেন, ‘‘বড়দের কাছে মারাদোনার বিশ্বকাপ জয়ের কথা শুনেছিলাম। ৩৬ বছর পরে সেই খরা কাটল। একটা জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন না করলে গোটাটাই কেমন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।’’
আর্জেন্টিনার জয়ের আনন্দে এ দিন মাতোয়ারা ছিল স্কুল ও কলেজের পড়ুয়ারাও। কলেজ স্ট্রিটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কটিশ চার্চ কলেজ— সর্বত্র ছিল প্রায় একই ছবি। স্কটিশ চার্চ কলেজের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে স্বপ্নিল বিশ্বাস বললেন, ‘‘কাল সারা রাত পাড়ায় হুল্লোড় হয়েছে। বন্ধুরা ডাকল বলে সকাল সকাল কলেজে চলে এসেছি। আজ বই-খাতা তোলা থাক, সারা দিন উৎসব হবে।’’ পাশ থেকে বিবিএ পড়ুয়া পরিচয় বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘২০১৪ সালে একটুর জন্য বিশ্বকাপ হাতছাড়া হয়েছিল। এ বার আর মেসিকে খালি হাতে ফিরতে হয়নি।’’
নিমতলা লেনের পুরোটাই আবার ঢেকে দেওয়া হয়েছিল আর্জেন্টিনার পতাকায়। ক্লাবের পক্ষ থেকে এ দিন সন্ধ্যায় ছিল পিকনিকের আয়োজন। ক্লাবের এক কর্তা কার্তিক পাল বলেন, ‘‘সবাই তো রাজনীতির জয়-পরাজয়ে আনন্দ করে। আমরা না হয় খেলা নিয়েই থাকলাম।’’