শতবর্ষের আলোয় উজ্জ্বল খালপাড়ে ‘খালু’দের কলেজ

খালপাড়ের কলেজে পড়তেন, তাই ‘এলিট’ মেডিক্যাল কলেজগুলির পড়ুয়ারা ওঁদের ‘খালু’ বলে ডাকত। কিন্তু অনেকটা সময় পেরিয়ে এসে এখন সেই ব্যঙ্গের নামটা নিয়েই অহঙ্কার করেন ওঁরা।

Advertisement

সৌভিক চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:০২
Share:

খালপাড়ের কলেজে পড়তেন, তাই ‘এলিট’ মেডিক্যাল কলেজগুলির পড়ুয়ারা ওঁদের ‘খালু’ বলে ডাকত। কিন্তু অনেকটা সময় পেরিয়ে এসে এখন সেই ব্যঙ্গের নামটা নিয়েই অহঙ্কার করেন ওঁরা।

Advertisement

ওঁরা সবাই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। আগামী ১৯ ডিসেম্বর পুনর্মিলন উৎসব উপলক্ষে আবার সবাই জড়ো হবেন। তবে এ বছরের পুনর্মিলন উৎসবের আমেজে যোগ হয়েছে অন্য এক মাত্রা। কারণ এ বারই যে একশো বছরে পা দিল ওঁদের কলেজ!

সেটা ১৮৮৬ সাল। মড়কে মড়কে অস্থির দেশ। ব্রিটিশ শাসনে চিকিৎসা ব্যবস্থা জনসাধারণের নাগালের বাইরে। এমনই একটা সময়ে রাধাগোবিন্দ করের নেতৃত্বে কয়েক জন চিকিৎসক বেসরকারি মেডিক্যাল স্কুল তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন। কলকাতার ১৬১ বৈঠকখানা রোডে তৈরি হল সেই মেডিক্যাল স্কুল। তার পরে অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে এসে ১৯১৬ সালের ৫ জুলাই জন্ম নিল এশিয়ার প্রথম বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ‘বেলগাছিয়া মেডিক্যাল কলেজ’। বছর তিনেক পরে কলেজের নাম বদলে হয় ‘কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজ’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে প্রতিষ্ঠাতা রাধাগোবিন্দ করের নাম অনুসারে কলেজের নাম হয় ‘আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ’। ১৯৫৮ সালে রাজ্য সরকার কলেজটির দায়িত্ব নেয়।

Advertisement

আর জি করের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের কাছে ১০০তম পুনর্মিলন উৎসবটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আসলে এখনই তো ফিরে দেখার সময়। একশো বছরে কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে আর জি কর।’’ আর জি করের এক সময়ের ছাত্র এবং বর্তমানের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের ছাত্রজীবনের তুলনায় রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ গুণ বেড়েছে। উত্তর কলকাতা এবং উত্তর শহরতলির অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন আসছেন। তবে রোগীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি পরিকাঠামোগত উন্নতি ততটা হয়নি বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা। এক চিকিৎসক জানাচ্ছেন, টালা পার্কের ইন্দিরা মাতৃসদন, জোড়াবাগানের অবিনাশ দত্ত মেটারনিটি হোম এবং কাশীপুরের নর্থ সাবার্বান হাসপাতাল আর জি করেরই বর্ধিত অংশ। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আসলে এই ক্যাম্পাসে আর নতুন করে কিছু বানানোর জায়গা নেই। তাই বর্ধিত অংশগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করে যদি কিছু রোগী পাঠানো যায়, তা হলে মূল হাসপাতালের উপর থেকে রোগীর চাপ কিছুটা কমবে। রোগীরাও ভাল পরিষেবা পাবে।’’

আর জি করের শিশু বিভাগের চিকিৎসক এবং প্রাক্তনী সংসদের সভাপতি নীলাঞ্জন ঘোষ জানালেন, গত দশ বছরে অনেকটাই বদলে গিয়েছে আর জি কর। সার্জারি, গাইনি, মেডিসিন, রেডিওথেরাপি ইত্যাদি বিভাগগুলি দারুণ কাজ করছে। তিনি আরও জানান, স্লিপ ক্লিনিক, স্মোকিং সিডেশন ইউনিট, সরকারি খরচে ককলিয়া প্রতিস্থাপন ইত্যাদি বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্প শুরু হয়েছে এখানে। তিনি বলেন, ‘‘ইন্ডিয়া টুডে-র একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, শিক্ষা, পরিকাঠামো এবং গবেষণা এই তিনটি দিক থেকেই আমাদের কলেজ পূর্ব ভারতে প্রথম। আসলে আর জি করের উপরে মানুষের আস্থা বাড়ছে বলেই এত ভিড় হচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করছি রোগীদের যথাযথ পরিকাঠামো দিতে।’’

সুবীরবাবু জানান, একশো বছর উপলক্ষে সারা বছর ধরেই বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল প্রাক্তনী সংসদ। আগামী বছর ৫ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠানগুলি চলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement