বিক্ষোভ: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে নির্মল মাজির উপস্থিতির বিরোধিতায় পড়ুয়াদের একাংশ। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (সিএমসি) বুকে নির্মল মাজির বিরোধিতার প্রাণ-প্রতিষ্ঠা করে ছাড়লেন চিকিৎসক পড়ুয়ারা!
বুধবার যে বিক্ষোভ সম্পর্কে রাজ্যের মন্ত্রী তথা সিএমসি-র রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজি বলেন, ‘‘হাতি যখন চলে, তখন অনেকে ঘেউ ঘেউ করে! হাতি লেজ দিয়ে মশা, মাছি তাড়ানোর মতো তাদের তাড়িয়ে দেয়।’’
১৮৬তম প্রতিষ্ঠা দিবস এবং সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নির্মলের উপস্থিতির বিরোধিতায় মঙ্গলবার রাতেই পোস্টার, ফেস্টুন, গ্রাফিতি তৈরি করেছিলেন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। সমাবর্তনের মঞ্চে কেন ইন্টার্নেরা নির্মলের হাত থেকে মানপত্র নেবেন, সেই প্রশ্নও তোলেন তাঁরা। আমন্ত্রিত অতিথিরা যাতে সেই বিরোধিতার খবর জানতে না পারেন, সে জন্য সোমবার গভীর রাতে কালো হরফে লেখা ‘নির্মল মাজি গো ব্যাক’ স্লোগানের উপরে চুন লেপে দেয় পুলিশ। সকালে তা জানতে পেরে ফের প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে সমাবর্তনের প্রেক্ষাগৃহ পর্যন্ত রাস্তা স্লোগানময় হয়ে ওঠে। পতাকা উত্তোলনের পরে যখন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা সিএমসি-র প্রাক্তনী প্রেক্ষাগৃহের দিকে যাচ্ছেন, তখন দু’ধারে পোস্টার হাতে বিক্ষোভকারীরা। ‘মেডিক্যালে নির্মল মাজি অবাঞ্ছিত’, ‘মেডিক্যালে কুকুরের ডায়ালিসিস চলবে না’— লেখা ছিল সেই পোস্টারে।
আরও পড়ুন: মেলায় সৃষ্টি আরও ১৩-র, বই লিখে সেঞ্চুরি মুখ্যমন্ত্রীর
নির্মল-ঘনিষ্ঠেরা ভেবেছিলেন, আর যা-ই হোক, বাইরের বিক্ষোভ সভাগৃহে প্রবেশের অনুমতি পাবে না। কিন্তু তা হয়নি। চিকিৎসক-নেতার বক্তৃতা চলাকালীন প্রেক্ষাগৃহের দু’ধারে বিরোধিতার পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। ‘নির্মল’ বক্তৃতায় সাফল্যের তালিকা যত দীর্ঘ হয়েছে, ততই জোরালো হয়েছে পড়ুয়াদের ‘শেম শেম’ ধ্বনি। অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানেরা আসন ছেড়ে বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু লাভ হয়নি। বিক্ষোভের এমন নাছোড়বান্দা মেজাজ দেখে প্রাক্তনীদের একাংশের কটাক্ষ, ‘‘প্রতিষ্ঠা দিবসে নির্মল বিরোধিতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হতে বাকি কিছু রইল না!’’ বিক্ষোভের সাক্ষী থাকলেও মন্তব্য করতে চাননি স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের একাংশ আবার এ দিনের ঘটনাক্রমকে আকস্মিক বলে মানতে নারাজ। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই ঘটেছে এ দিন।
আরও পড়ুন: ওভারটাইমে রাশ টানার সিদ্ধান্ত পুরসভার
গত বছর এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসক নিগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন চলাকালীন ‘গো ব্যাক’ স্লোগান শুনেছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন। সে সময়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেই পড়ুয়াদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে দ্রুত হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হন নির্মলও। সে সবের মধ্যে একটা কার্য-কারণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এ দিন কোনও ঘটনা ছাড়া যে ভাবে নির্মল-ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, তা ‘নজিরবিহীন’ বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ।
এ দিন বক্তৃতার শুরুতেই বিক্ষোভরত চিকিৎসক ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে নির্মল বলেন, ‘‘অনেক হয়েছে, অনেক বিক্ষোভ দেখিয়েছ তোমরা! জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আমিও বিক্ষোভ দেখিয়েছি। কিন্তু প্রতিষ্ঠা দিবস, সমাবর্তনের আবহ নষ্ট করিনি।’’ এর পরেই তাঁর ওই বিতর্কিত মন্তব্য। যে মন্তব্য প্রসঙ্গে এ দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্য মন্ত্রিসভার বর্ষীয়ান সদস্য শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সভাগৃহের ভিতরে এ ধরনের ক্ষোভ প্রদর্শন সমীচীন নয়। তবে ছাত্রেরা ভুল করবেই। আমরা বড়রা বিষয়টি ক্ষমার চোখে দেখলেই ভাল হয়।’’
বিক্ষোভের কারণ সম্পর্কে নয়নচাঁদ দাস নামে এক চিকিৎসক ছাত্র জানান, সমাবর্তন অনুষ্ঠান পড়ুয়াদের। প্রতিষ্ঠা দিবস কলেজের অনুষ্ঠান। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসক ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠানে কেন রাজনৈতিক নেতারা থাকবেন? আমাদের সম্মানিত করবেন আমাদের কলেজেরই বিদগ্ধ চিকিৎসকেরা। রাজনৈতিক নেতাদের হাত থেকে ইন্টার্নেরা মানপত্র নেবেন কেন?’’
আরও পড়ুন: ১৮২ জন তরুণীর ঘনিষ্ঠ ভিডিয়ো তুলে গ্রেফতার
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় নির্মল বলেন, ‘‘এই বিক্ষোভের পিছনে কিছু অতি বামপন্থী লোক আছেন। যাঁরা অবসাদ, হতাশা, ব্যর্থতা থেকে এ সব করেছেন।’’
এ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচির জের বহু দূর গড়াবে বলে মত সরকারি চিকিৎসকদের একাংশের। সিএমসি সূত্রের খবর, অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায়ের ভূমিকা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্মল। প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকের উপস্থিতিতে কী ভাবে ছাত্রছাত্রীরা প্রেক্ষাগৃহে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে পারলেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। যদিও এ বিষয়ে মঞ্জুশ্রীদেবী কিছু বলতে চাননি।