—প্রতীকী চিত্র।
বড়দিন ও বর্ষবরণের উৎসবের হুল্লোড় এবং ভিড়ে মাদকের রমরমা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকেই। হোটেল-রেস্তরাঁয় মধ্যরাত পর্যন্ত চলা মোচ্ছবের আড়ালে মাদকের বেলাগাম কারবার চলার আশঙ্কাও থাকে। তাই মাদকের বিক্রি রুখতে এ বার বর্ষশেষের উৎসবের আগে বিশেষ পরিকল্পনা করছেন কলকাতা পুলিশের নার্কোটিক্স বিভাগ এবং ‘নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো’ (এনসিবি)-র কর্তারা। উৎসবের ভিড়ে মাদকের কারবার ও চোরাপথে শহরে মাদকের প্রবেশ আটকানোই চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিচ্ছেন আধিকারিকেরা।
শহরের হোটেল, রেস্তরাঁ, পানশালাগুলিতে বিভিন্ন সময়ে লুকিয়ে মাদকের কারবার চালানোর অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, বর্ষশেষের উৎসবকে কেন্দ্র করে মধ্যরাত পর্যন্ত হইহুল্লোড়, নাচ-গানের ভিড়েই চলে মাদকের হাতবদল। বাদ যায় না পাঁচতারা হোটেলগুলিও। বছর দুই আগে শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলের পার্টিতে অতর্কিতে অভিযান চালিয়ে বেআইনি মাদক ব্যবহারের হদিস পেয়েছিল লালবাজার। তাই মাদকের রমরমা রুখতে উৎসব শুরুর কয়েক দিন আগেই অতর্কিতে হানায় জোর দিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের তরফে প্রতিটি থানাকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে এলাকায় পানশালা বা রেস্তরাঁর সংখ্যা বেশি, সেখানকার থানাগুলিকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
মূলত বছর শেষ এবং শুরুর কয়েক সপ্তাহে শহরে রেস্তরাঁ বা পানশালাগুলিতে বেশি ভিড় থাকে। একাধিক হোটেল, ডিস্কো থেকে রাতভর চলে উৎসব। ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি, ই এম বাইপাসের রেস্তরাঁ-পানশালাগুলিতে ভিড় জমান কমবয়সিরা। সেই সব এলাকার জন্য এ বার অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে লালবাজার। নজরদারির জন্য ইতিমধ্যেই চারশোরও বেশি সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করা হয়েছে। থাকছে আলাদা ভাবে পার্টি বা ডিস্কোয় ঢুকে গোপনে নজরদারি চালানোর নির্দেশ। লালবাজার সূত্রের খবর, কে বা কারা নিয়মিত পানশালা বা পার্টিগুলিতে আসছেন— সে দিকে থাকবে কড়া নজর। কলেজপড়ুয়াদের একাংশের মধ্যে নিয়মিত মাদক সেবনের বিষয়টি নজরে এসেছে লালবাজারের। হাতখরচ জোগাড় করতে তাঁদের অনেকে আবার মাদক কেনাবেচার সঙ্গেও যুক্ত বলে জানতে পারছেন পুলিশকর্তারা। বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়া মাদকাসক্তদের জেরা করেই এ বিষয়ে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। লালবাজারের এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট গোপন তথ্য ও তল্লাশিই হল মাদক ধরার অন্যতম হাতিয়ার। হোটেল, পানশালাগুলির ফ্লোর থেকে শুরু করে শৌচালয়— পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কোনও কিছুই বাদ দেওয়া যাবে না।’’
বিশেষ পরিকল্পনা থাকছে এনসিবি-র তরফেও। এনসিবি-র এক কর্তা জানাচ্ছেন, কলকাতার পার্টিগুলিতে মিথাকুইনোন, অ্যাটিভান, কোকেন, এমডিএমএ, এলএসডি, হেরোইন জাতীয় মাদকের চাহিদা বেশি থাকে। মূলত সাঙ্কেতিক নামে সেগুলি বিক্রি হয়। ‘পুরিয়া’, ‘খোকা’ বা অন্য নামে পার্টিতে ক্রেতার কাছে ওই মাদক পৌঁছে দেওয়া হয়। মাদক আনা-নেওয়া করতে কখনও কুরিয়র পরিষেবা, আবার কখনও ডার্ক-ওয়েবের সাহায্যও নেওয়া হয়। তাই শহরে মাদকের প্রবেশ আটকানোই চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেওয়া হচ্ছে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘কখনও পানশালা বা রেস্তরাঁর নিচুতলার কর্মীদের একাংশকে ব্যবহার করে, আবার কখনও কোনও ছদ্মবেশে মাদকের কারবার চলে। সারা বছরই এ সব মাথায় রেখে আমাদের নজরদারি চলে। তবে বর্ষশেষে সেই নজরদারি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে হয়। সেই মতো পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’