ফাইল চিত্র।
সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকের স্ট্রেচারে জরুরি বিভাগের রোগীর অধিকার নেই। তাই সঙ্কটজনক রোগীকে মাঝপথে স্ট্রেচার বদল করতে বাধ্য করলেন সরকারি কোভিড হাসপাতালের রক্ষীরা। শনিবার দুপুরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার পরে ওই রোগীর পরিজনদের প্রশ্ন, ‘‘চিকিৎসা না কি স্ট্রেচারের রং, কোনটা বেশি জরুরি!’’
জানবাজারের বাসিন্দা, বছর বাষট্টির এক প্রৌঢ় চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। তাঁর জামাই জানান, এ দিন সকালে প্রৌঢ়ের দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ৭০-এ নেমে যাওয়ায় তাঁরা তাঁকে নিয়ে মেডিক্যালের সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকে (এসএসবি) যান। সেখানে ফিভার ক্লিনিকের চিকিৎসকেরা প্রৌঢ়কে দেখে করোনা পরীক্ষা করাতে বলেন। কিন্তু আরটি-পিসিআরে দ্রুত রিপোর্ট পাওয়া সম্ভব নয়। তাই জরুরি বিভাগে র্যা্পিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। জামাই জানান, জরুরি বিভাগ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার ক্ষমতা ওই প্রৌঢ়ের ছিল না। এসএসবি ব্লকে রাখা হুইলচেয়ার নিতে গেলে সেখানকার কর্মীরা বাধা দেন বলে অভিযোগ। স্ট্রেচার নিতে গেলেও আপত্তি জানানো হয়।
রোগীর জামাই বলেন, ‘‘হাসপাতালের কর্মীদের বক্তব্য ছিল, রোগী যে হেতু জরুরি বিভাগে যাবেন, তাই সেখানকার স্ট্রেচার বা হুইলচেয়ার আনতে হবে। এসএসবি ব্লকের স্ট্রেচার দেওয়া যাবে না।’’ এ কথা শুনে রোগীর ছেলে জরুরি বিভাগ থেকে স্ট্রেচার আনতে যান। কিন্তু সেখানে স্ট্রেচার না থাকায় তিনি ফিরে আসেন। এ দিকে, প্রৌঢ়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে দেখে এসএসবি ব্লকের কর্মীদের আপত্তিতে কান না দিয়ে একটি স্ট্রেচারে তাঁকে শুইয়ে জরুরি বিভাগের পথে রওনা হন পরিজনেরা। উপাধ্যক্ষের কার্যালয় পর্যন্ত চলেও এসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু মাঝপথে এসএসবি-র রক্ষীরা ধেয়ে এসে স্ট্রেচার আটকে দেন বলে অভিযোগ।
রক্ষীদের এমন আচরণ দেখে অন্য রোগীর পরিজনেরা জড়ো হয়ে যান। বাবাকে স্ট্রেচারে শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে দেখে আবার দৌড়ে জরুরি বিভাগে যান ছেলে। তিনি বলেন, ‘‘কী অবস্থায় বাবাকে ফেলে এসেছি, তা জানার পরে নাম লিখে স্ট্রেচার দেওয়া হয়।’’ স্ট্রেচারের কারণে প্রায় ৪০ মিনিট মাঝপথেই আটকে ছিলেন প্রৌঢ়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁর অবস্থা দেখে গ্রিন বিল্ডিংয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে উপাধ্যক্ষ তথা সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘অত্যন্ত অন্যায় কাজ হয়েছে। নিয়ম রোগীদের স্বার্থে তৈরি হয়েছে। সঙ্কটজনক রোগীর স্ট্রেচার আটকানো ঠিক হয়নি। এ ক্ষেত্রে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নেব। রোগীর পরিজনদের অনুরোধ, এ ধরনের সমস্যা হলে তৎক্ষণাৎ সুপারের অফিসে যোগাযোগ করবেন।’’