ফাইল চিত্র।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার জন্য রাজ্য সরকারকে জাতীয় পরিবেশ আদালতের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করার ঘটনার পরে দু’সপ্তাহও কাটেনি। তার মধ্যে ফের একই কারণে, অর্থাৎ যত্রতত্র জঞ্জাল পড়ে থাকার দরুণ নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এনকেডিএ) কাছ থেকে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নির্দেশ দিল আদালত।
গত শুক্রবারের এই রায়ে আদালত পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছে, নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া টু-র একাংশে উন্মুক্ত জায়গায় জঞ্জাল পড়ে থাকার জন্য পরিবেশগত কত ক্ষতি হয়েছে, আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সেই হিসাব করে তার পরের দু’সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ আদায় করতে। এই সংক্রান্ত একটি ‘অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট’ আগামী ২ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে জমা দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া টু এলাকায় জঞ্জালের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার ছবি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলেন ওই উপনগরীর বাসিন্দা এক নাগরিক। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছিল আদালত। কী ভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হল, তা জানতে চেয়ে এনকেডিএ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, বিধাননগর পুরসভা এবং রাজ্য পরিবেশ দফতরকে নোটিস পাঠিয়েছিল তারা। উত্তরে এনকেডিএ জানায়, যে সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ এবং তা ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা এনকেডিএ-র অজ্ঞাতসারেই গত ১৮ অগস্ট থেকে ২২ অগস্ট খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলে রেখেছিল। আবর্জনা ওই ভাবে ফেলে রাখার কারণ জানতে চাইলে সংস্থা জানায়, তাদের চারটি কম্প্যাক্টরের মধ্যে কাজ চলাকালীন দু’টি কম্প্যাক্টর বিকল হয়ে যায়। মাত্র দু’টি কম্প্যাক্টরের মাধ্যমে কাজ চালাতে হয়েছিল। সেই কারণে সাময়িক সময়ের জন্য ওই এলাকায় জঞ্জাল জমে ছিল।
কিন্তু সেই ব্যাখ্যায় অসন্তুষ্ট আদালতের বক্তব্য, দু’টি কম্প্যাক্টর বিকল হওয়ার কারণে আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণের কাজ বাধাপ্রাপ্ত না হওয়া নিশ্চিত করতে হত এনকেডিএ-কেই। বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে অন্য কম্প্যাক্টর ভাড়া করতে হত তাদের। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে, নিয়োগ করা সংস্থার ব্যর্থতার দায়ও এনকেডিএ-র। তাই পর্ষদকে ক্ষতিপূরণ আদায়েরএই নির্দেশ।
তবে বার বার আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার সমালোচনা করেছে পরিবেশবিদ মহল। তাদের বক্তব্য, কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যথাক্রমে গত আট ও পাঁচ বছরে আদালত একাধিক বার নির্দেশ দিলেও তা পালন করেনি সরকার। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘আবর্জনা সংগ্রহ, পৃথকীকরণ ও তার প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতিতে ফাঁক থেকে যাওয়ার বিষয়টি একাধিক বার চিহ্নিত করেছে আদালত। সেই মতো পদক্ষেপ করতে বলেছে। কিন্তু তার পরেও রাজ্য সরকার কর্ণপাত করেনি।’’ পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-র সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত আবার জানাচ্ছেন, গত পাঁচ বছর ধরে সমস্ত ধরনের আবর্জনার যথাযথ প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে সংগঠনের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে লাগাতার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু সরকারি আমলাদের বিবৃতি জারি করে কর্তব্য পালন করা হয়েছে। এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়াটা রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে রাজ্য সরকার!’’