শব্দদানব দাপাবে এ বারও, আশঙ্কা

দেশের বাকি জায়গায় শব্দবাজি বারণ না হলেও পশ্চিমবঙ্গে তা নিষিদ্ধ হয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উদ্যোগে। কিন্তু পর্ষদ সূত্রের খবর, এখন তাদেরই এক কর্তা বিভিন্ন বৈঠকে ঠারেঠোরে বলেন, অন্য রাজ্যের মতো বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল করে দিলে, মানে শব্দবাজি এখানেও আইনসিদ্ধ করে দিলেই হয়।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:০০
Share:

বাঁধ দেওয়ার কথা যাঁর, তিনিই আগল খুলে দিতে উদ্যোগী!

Advertisement

দেশের বাকি জায়গায় শব্দবাজি বারণ না হলেও পশ্চিমবঙ্গে তা নিষিদ্ধ হয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উদ্যোগে। কিন্তু পর্ষদ সূত্রের খবর, এখন তাদেরই এক কর্তা বিভিন্ন বৈঠকে ঠারেঠোরে বলেন, অন্য রাজ্যের মতো বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল করে দিলে, মানে শব্দবাজি এখানেও আইনসিদ্ধ করে দিলেই হয়। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা হয়, আশপাশ বা পারিপার্শ্বিক শব্দের সীমা সর্বোচ্চ থাকা উচিত ৬৫ ডেসিবেল। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, শব্দবাজির ব্যবহারে ওই সীমা আরও ২০ ডেসিবেল বেড়ে যায়। এ রাজ্যে শব্দবাজির সর্বোচ্চ সীমা অবশ্য ৯০ ডেসিবেল।

তখন সেই কর্তা জানান, তা হলে পারিপার্শ্বিক শব্দের সর্বোচ্চ সীমাটাই বাড়িয়ে দেওয়া হোক। মানব স্বাস্থ্যের পক্ষে যে ৬৫ ডেসিবেলের বেশি পারিপার্শ্বিক শব্দ ক্ষতিকর সেটা ওই কর্তার মাথায় থাকে না।

Advertisement

পর্ষদের একটি সূত্রের খবর, ওই কর্তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বাজি ব্যবসায়ী।

এই অবস্থায় আসন্ন কালীপুজো ও দেওয়ালির কথা মাথায় রেখে কাল, সোমবার, টালা পার্কে কলকাতা পুলিশের উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের বাজি ফাটিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হবে, কোনটা ৯০ ডেসিবেলের মধ্যে, কোনটা তার বেশি। সেই মতো নিষিদ্ধ বাজির তালিকা তৈরি করবে পুলিশ। আগে এই পরীক্ষা হতো তারাতলার নেচার পার্ক সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায়।

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে আতসবাজির সর্বোচ্চ শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই শব্দসীমার মধ্যে খেলনা বন্দুকে ফাটানোর ক্যাপ ছাড়া অন্য শব্দবাজি হওয়া সম্ভব নয়। মোদ্দা কথা, পশ্চিমবঙ্গে শব্দবাজি নিষিদ্ধ। বছর বছর এক-এক রকম শব্দবাজির নামও পাল্টে এক-এক রকম দেওয়া হয়। সেই মতো সে সব পরীক্ষা করে নিষিদ্ধ বাজির তালিকা তৈরি করে লালবাজার বিজ্ঞপ্তি দেয়।

কিন্তু তাতে শব্দবাজি এ বার কতটা ঠেকানো যাবে, সেই ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের একাংশ সন্দিহান। বিশেষ করে দুর্গাপুজোর বিসর্জন শোভাযাত্রায় শব্দবাজির যা দাপট ছিল। পুলিশ ও পর্ষদের কোনও কোনও অফিসার একে কালীপুজোর সময়ে আসল প্রদর্শনের আগে ‘সফল মহড়া’ বলে মনে করছেন।

এ বার উৎসবের মরসুমে দুর্গাপুজো শুরুর আগে পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ ১২০০ কেজি শব্দবাজি আটক করেছে। তার পরে, শনিবার শব্দবাজির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এ দিন বেলেঘাটা থেকে প্রায় ১৩০ কেজি শব্দবাজি আটক করেছে পুলিশ।

লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘এক বার শব্দবাজি তৈরি হয়ে গেলে মুশকিল। সেটা যে ভাবে হোক, বাজারে আসবেই। আমরা কত ধরব, ক’জায়গায় অভিযান চালাব!’ ওই অফিসারের কথায়, ‘‘বাজির ক্ষেত্রে সোজাসাপটা নীতি না থাকলে, সেটা নিয়ে টালবাহানা হলেই মুশকিল।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে দুর্গাপুজোর বিসর্জনের মিছিলে বিকট শব্দে শেল ফাটার পর কয়েক জনকে রানিকুঠির কাছে ধরা হয়। তাঁরা কিন্তু চালান দেখিয়ে বলেন, লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিক্রেতার কাছ থেকে ওই বাজি কেনা হয়েছে, তা হলে তা নিষিদ্ধ হয় কী করে! পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেয়।

টালা বাজি বাজারের সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না অবশ্য বলেন, ‘‘শব্দবাজি এই রাজ্যে নিষিদ্ধ। তাই, আমাদের বাজি বাজারে ওই জিনিস বেচাকেনা হবে না।’’

তবে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এ বছর ৫ মে বাজির শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেল বলে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও বলেছে, ১২৫ ডেসিবেল শব্দসীমার বাজি এখানে তৈরি করা যাবে। কিন্তু এখানে তা ব্যবহার বা বিক্রি করা যাবে না, পাঠাতে হবে ভিন্ রাজ্যে।

পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক, বর্তমানে পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ২০০৪-এ পরীক্ষামূলক ভাবে ছ’টি কারখানাকে শব্দবাজি তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল এই শর্তে যে, নিজেদের উৎপাদন তারা বাইরেই পাঠাবে। কিন্তু সেই ফাঁক গলে সে বার বিপর্যয় হওয়ায় পর্ষদ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘পর্ষদ এ বছর শব্দবাজির উৎপাদক ও কারবারিদের সুবিধা করতেই ওই কৌশলী বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ভিন্ রাজ্যে নয়, এ বার দেদার শব্দবাজি এই রাজ্যের বাজারেই ঢুকবে, যদি না ইতিমধ্যেই ঢুকে গিয়ে থাকে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement