কলকাতা পুরভোটে এই প্রথম রাজ্য পুলিশ

জংলা পোশাকের আধা সামরিক বাহিনী নয়, এ বার কলকাতা পুরভোটে দেখা যাবে রাজ্য পুলিশের খাকি উর্দিধারীদের। কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি তারা বুথ পাহারা দেবে, টহলও দেবে এলাকায়। লালবাজারের খবর, ১৮ এপ্রিল, শনিবার পুরভোটে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কলকাতা পুলিশের ২৫ হাজার সাদা পোশাকের সঙ্গে দেখা যাবে ৫ হাজার খাকি উর্দির বন্দুকধারীকে। কলকাতার পুরভোটে যা প্রথম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৫৩
Share:

জংলা পোশাকের আধা সামরিক বাহিনী নয়, এ বার কলকাতা পুরভোটে দেখা যাবে রাজ্য পুলিশের খাকি উর্দিধারীদের। কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি তারা বুথ পাহারা দেবে, টহলও দেবে এলাকায়। লালবাজারের খবর, ১৮ এপ্রিল, শনিবার পুরভোটে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কলকাতা পুলিশের ২৫ হাজার সাদা পোশাকের সঙ্গে দেখা যাবে ৫ হাজার খাকি উর্দির বন্দুকধারীকে। কলকাতার পুরভোটে যা প্রথম।

Advertisement

শহরে ভোট-পাহারায় আদৌ কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে কি না, তা নিয়ে বুধবারও আশা জিইয়ে রেখেছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। নবান্নের বক্তব্য, পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে পারবে কি না, তা জানতে চেয়ে দিল্লিতে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ মাওবাদী প্রভাবিত বিভিন্ন রাজ্য ও কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় বাহিনী মজুত থাকায় পুরভোটে এক কোম্পানিও আধাসেনা পাঠানো যাবে না। এর পরে এ ব্যাপারে আর কিছু জানায়নি কেন্দ্র। রাজ্য সরকার তাই নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে বলে রাজ্যের বিজেপি নেতারা দাবি করছেন। অথচ দিল্লিতে তাঁদের সরকার কোনও উচ্চবাচ্য করছে না।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিনও দাবি করেছেন, সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে ফোন করে জানতে চান, পুরভোটের জন্য কত বাহিনী দরকার। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব তার কোনও ইতিবাচক উত্তর দেননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকার জানাচ্ছেই না কত বাহিনী তাদের দরকার।’’ রাহুলবাবুরা তাই রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হতে আর্জি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার দলের পক্ষ থেকে কমিশনারের কাছে এই মর্মে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

যদিও রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা রাহুলবাবুর দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। আর রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর ব্যাপারে দিল্লিকে সরাসরি কিছু বলার এক্তিয়ারই নেই তাদের। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘‘রাহুলবাবু না জেনেই এ সব বলছেন।’’

কেন্দ্র না বলে দেওয়ার পরে গত শনিবার রাহুলবাবুই প্রথম দাবি করেন কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে। রাজনৈতিক স্তরে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বিজেপির এক রাজ্য নেতা পথসভা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসার কথা বলছেন। এতে সাংবিধানিক প্রশ্ন উঠবে। প্রশাসনিক ব্যাপারে কথা বলার কী অধিকার তাঁর রয়েছে?’’

রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, আধাসেনা পাওয়া যাবে না ধরে নিয়েই ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া হয়েছে। দার্জিলিং থেকে তিন কোম্পানি আধাসেনা (২৫০ জওয়ান) কলকাতার ভোটে থাকবে। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘শহরের স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে ৪৮টি মোবাইল ভ্যানে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। তাদের সঙ্গে থাকবেন কলকাতা পুলিশের আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা।’’ এর উপরে ৫ হাজার রাজ্য পুলিশও আনা হবে বিভিন্ন জেলা থেকে।

লালবাজারের হিসেবে, পুরভোটে প্রায় ১৪০০ নির্বাচনী কেন্দ্র ও ৫ হাজারের বেশি বুথ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৬টি কেন্দ্র ‘স্পর্শকাতর’। এগুলি মূলত উত্তর কলকাতার কাশীপুর, পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা, দক্ষিণ শহরতলির যাদবপুর ও বন্দরের গার্ডেনরিচের মতো থানা এলাকার মধ্যে পড়ছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৩০টি ওয়ার্ডকে ‘অতি স্পর্শকাতর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কাশীপুর, শ্যামপুকুর, টালা পার্ক, উল্টোডাঙা, বেলেঘাটা, যাদবপুর, মেটিয়াবুরুজের মতো এলাকা রয়েছে এর মধ্যে। লালবাজার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে এক জন অফিসারের নেতৃত্বে ৪-৫ জন সশস্ত্র পুলিশ থাকবে। এক জায়গায় ৪টির বেশি বুথ থাকলে বাড়তি পাহারা থাকবে।

এ দিন দুপুরে শেক্সপিয়র সরণির কলামন্দিরে ছিল কলকাতা পুলিশের প্রাক-নির্বাচনী সভা। পদস্থ অফিসার থেকে সাব ইনস্পেক্টর— সব মিলিয়ে প্রায় দু’হাজার পুলিশ উপস্থিত ছিলেন। লালবাজার সূত্রে খবর, ভোটের আগে শহরে যে ভাবে সংঘর্ষ, হিংসার ঘটনা ঘটছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। এমন ঘটনা আটকাতে থানার ওসি-দের নজরদারি বাড়ানো ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সিপি। তাঁর বক্তব্য, ট্রাফিক পুলিশকে এই সময়ে শুধু যান শাসন করলেই হবে না, আইনশৃঙ্খলাজনিত কোনও ঘটনা দেখলে বা শুনলেই থানায় খবর দিতে হবে। সিপি বলেছেন, ‘‘রাজ্যে ৯২টা পুরসভায় ভোট হলেও সকলের নজর কলকাতা পুরনির্বাচনের দিকে। তাই এমন ভাবে কাজ করতে হবে, যাতে কলকাতা পুলিশের সুনাম অক্ষুণ্ণ থাকে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement